বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেশে ৭৩ দশমিক ছয় শতাংশ শিশু বাবা-মার হাতে নির্যাতনের শিকার বলা হয়েছে।
ব্যুরোর জুলাইয়ে প্রকাশিত 'প্রগতির পথে' বইটিতে নির্যাতনের শিকার এসব শিশুর বেশিরভাই তিন/চার বছর বয়সী বলে জানানো হয়েছে। খাওয়াতে, পড়াতে আর শৃঙ্খলা শেখাতে গিয়ে মা-বাবারা বেশি মারধর করে থাকেন।
পাঁচ মাস ধরে ৫৯ হাজার ৮৯৫টি পরিবারের ৭৫ হাজার ৯০৭ জন শিশুর উপর এ জরিপ করা হয়।
এ নিয়ে কথা হয় কয়েকজন অভিভাবকের সাথে।
অভিভাবক ফরিদা বেগম জানান, সন্তানকে শাসনের জন্য মারধর করতে বাধ্য হন তিনি।
তিনি মনে করেন, মাঝে-মধ্যে সন্তানদের শাসন না করলে ওরা আরো বেশি দুষ্টামি করে।
রাইসা খাতুন নামের আরেক অভিভাবক জানান, তার ছেলে ঠিকমত কথা শুনতে চায় না। তাই রাগ করে অনেক সময়ই ছেলেকে মারধর করেন তিনি। যদিও পরে তার খুব কষ্ট হয়।
তবে সন্তানদের মারধর করার পক্ষে নন তিনি।
একই কথা জানালেন অভিভাবক ওয়াসিম মিয়া।
তিনি জানান, অধিকাংশ অভিভাবকই ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে মারধর ও বকাঝকা করে থাকেন। এভাবে মেরে নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখানো উচিত নয়। এর ফলাফল ভালো নাও হতে পারে।
সন্তানদেরকে মারধর না করে, যে কোন বিষয় বুঝিয়ে বলাটাকেই প্রাধান্য দেন তিনি।
শিশুদের ওপর এর প্রভাব জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. মানিক কুমার তালুকদার জানান, বাবা-মার কখনোই উচিত নয় শিশুকে অতিরিক্ত শাসন বা মারধর করা। এতে শিশুর উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এতে তার স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যেহেতু শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাবা-মার সঙ্গ ও ভূমিকা খুবই জরুরি তাই বাবা মাকে বন্ধু হয়ে সন্তানের পাশে থাকার পরামর্শ তার।
এছাড়া না মেরে কোন ব্যাপার বুঝিয়ে বললে শিশু তা সহজেই গ্রহণ করে বলেও জানান তিনি।
শিশুর ওপর পারিবারিক নির্যাতনের আইনি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিস (বিআইএলএস) এর আইনজীবী নজরুল ইসলাম জানান, শিশুকে মারধরের অপরাধে বাবা-মার জন্য নির্দিষ্ট কোন আইন নেই। তবে ২০১৩ সালের শিশু আইনের ৭০নং ধারা অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি তার হেফাজতে থাকা কোন শিশুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে পারবেন না। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা এক লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয়ই।