গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের চারটি স্কুলের পড়ুয়ারা এই অভিযোগ করে।
স্কুলগুলোয় গিয়ে দেখা যায় এর দুইটি স্কুলের শৌচাগারে তালা লাগানো রয়েছে। আর একটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন শৌচাগারের ব্যবস্থাই নাই। বাকিটায় দুটো শৌচাগারের একটি খোলা থাকলেও সাবান, পানি আর পরিচ্ছন্নতার প্রচণ্ড অভাব দেখা যায়।
শ্রীপুর উপজেলার এই স্কুলগুলো হচ্ছে- নান্দিয়া সাংগুন আবাহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাপতা ঈদগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩৮ নং কাঠালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে দেশে নানান প্রচার চললেও এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিযোগে ফুটে ওঠে ভিন্ন চিত্র।
নান্দিয়া সাংগুন আবাহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শৌচাগার শুধু শিক্ষকরা ব্যবহার করেন এবং অন্য যেটি শিশুদের জন্য বলা হচ্ছে সেটি এখনও তৈরিই হয়নি।
স্কুলের ছাত্ররা জানায়, শিক্ষকদের ব্যবহৃত শৌচাগারটি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, তিন বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ এই শৌচাগারটিকে অর্ধনির্মিত অবস্থায় দেখছে। এটায় স্ল্যাব পর্যন্ত বসানো হয়নি।
প্রতিবেদক উপজেলার অপর স্কুল বরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখে এটির দুটি শৌচাগারের মধ্যে একটি খোলা থাকলেও সাবান, পানি, পরিচ্ছন্নতার কোনো বালাই নেই।
তবে শিক্ষার্থীরা এব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
শৌচাগার তালা দেওয়া কেন জানতে চাইলে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবু তাহের বলেন, “ল্যাট্রিনে রং দেওয়ার কারণে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে।”
তবে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
এবার দেখা যাক বাপতা ঈদগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। এখানে রয়েছে দুটি শৌচাগার। তবে দুটোতেই তালা দেওয়া দেখা যায়।
কেন তালা দেওয়া জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন চট করে বলেন, “বৃষ্টির জন্য আজ খোলা হয়নি।”
৩৮ নং কাঠালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও গিয়ে শৌচাগার তালা মারা পায় প্রতিবেদক। আর
স্কুলে পানির সংযোগও নেই।
সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান জানান, বাইরের লোকে নোংরা করে ফেলে তাই তালা লাগানো থাকে। প্রয়োজন মত শিক্ষার্থীরা চাবি নিয়ে খুলে ব্যবহার করে।
ভিন্ন সুর এক অভিভাবকের কথায়। তার প্রশ্ন- কতবার শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে টয়লেটের প্রয়োজনে চাবি চাইবে?
শৌচাগারের সমস্যা নিয়ে খোলা মেলা কথা বলে প্রাথমিক পাশ করে যাওয়া মনিরুল ইসলাম, সাদিয়া আফরিন ও তাপসি রাবেয়া।
তারা জানায়, স্কুলের ল্যাট্রিন তালা দেওয়া থাকে বলে অনেক বাচ্চাই খোলা মাঠে প্রস্রাব করে।
তাপসি রাবেয়া জানায়, শৌচাগার না থাকায় সে স্কুলে গিয়ে ভয়ে পানিই খেত না।
স্কুলগুলোর বেহাল দশা নিয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার এমদাদুল করিমের সঙ্গে।
তিনি হ্যালোকে বলেন, "আজকের মধ্যেই প্রধান শিক্ষকদের তলব করা হবে।
"আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান চিত্রে পরিবর্তন আসবে।"
তবে অনেক স্কুলেই একই ধরণের সমস্যা রয়েছে বলে গতবছর দেশব্যাপী করা ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন সার্ভেতে উঠে আসে।
জরিপে দেখা যায়, চার ভাগ সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে কোন শৌচাগার নাই, ১২ ভাগ স্কুলের শৌচাগারের বেহাল দশা। তিন ভাগের এক ভাগ স্কুলে সাবানসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ৫৫ শতাংশ শৌচাগারই তালা দেওয়া থাকে।