মুক্তির উল্লাসে ছিটমহল

ছিটমহল নামের ৬৮ বছরের বন্দীশালা থেকে মুক্তি লাভের সব বাধা দূর হওয়ায় উল্লাসে ফেটে পড়েছে ছিটমহলবাসী। আনন্দে অনেকের চোখে জল।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এই ছিটমহল সমস্যা তৈরি হয়। এ সময় ভারত ও পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ভারতের মধ্যে পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভারতের ছোট ছোট এলাকা ছিটমহল নামে পরিচিত। এক দেশের মধ্যে অন্য দেশের এলাকা হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা নাগরিক সুবিধা পাচ্ছিল না।

তাদের এই দুর্দশা কাটাতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি করেন। কিন্তু দেশের জমি বিনিময়ে ভারতের সংবিধান সংশোধনের জটিলতায় তা আটকে যায়।

পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সে সময়ের ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমহন সিং-এর স্থল সীমান্ত বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের লোকসভায় ৭ মে এটি পাশ করা হয়।

ভারতের পার্লামেন্টে এটি পাশ হওয়ায় এখন আর কোনো বাধা নেই দুদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ে। এই খবরে নীলফামারীর চারটি ছিটমহলের বাসিন্দারা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে।

গিদালদহ ছিটমহলের বাসিন্দা চাতালশ্রমিক নূর হোসেন (৪০) বলেন, “কাগজে-কলমে আমরা ছিলাম ইন্ডিয়ান ছিটবাসী। আজ খালাশ পেলাম।”

বড় খানকাবাড়ি খারিজা বাসিন্দা যদুনাথ চন্দ্র রায় বলেন, “৬৮ বছরের বন্দী দশা থেকে আমরা মুক্তি পেলাম।

“ছিটমহলবাসীদের নাগরিকত্বের কোনো কিছুই ছিল না। আমরা জমি বিক্রি করতে পারতাম না, ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করতে পারতাম না।

“ছিটমহল বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হলাম, এবার হবো ভোটার। এখন মরেও শান্তি পাবো।”

নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায় বড়খানকাবাড়ি খারিজা, তালুক বড়খানকা খারিজা, গীতালদহ, জিগাবাড়ী এই চারটি ছিটমহল।

৯৩ একর জমি নিয়ে এই চারটি ছিটমহল। শেষ বারের জনগণনায় এখানে ১১৯টি পরিবারের ৪৯৬ জন মানুষ বাস করে বলে জানানো হয়েছে।

জিগাবাড়ী ছিটমহলের জয়নাল আবেদীন (৬২) জানান, ছিটমহলের বেশির ভাগ মানুষ গরিব। প্রায় সবাই কৃষিশ্রমিক।

“আমরা আজ বাংলাদেশের নাগরিক হলাম। দীর্ঘদিনের ছিটবাসীর অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলাম।”

ছিটমহলের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও আনন্দ করছে।

শিশুদের মধ্যে রতন, বৈশাখ, মুন্না, তহুরাসহ অনেকে জানায়, তারা ছিটমহল সম্পর্কে তেমন কিছু বোঝে না। তবে এত দিন তারা নিজেদের ভারতীয় জানতো, এখন তারা বাংলাদেশি হয়েছে বলে আনন্দ করছে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছিটমহলবাসী বাচ্চু বলেন, আজ যদি বাপ দাদারা বেঁচে থাকতেন তাহলে কত না খুশি হতেন।

নীলফামারী ছাড়াও অন্য জেলাতেও ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি এবং ভারতে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর আর ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com