বিলুপ্তির পথে রাজশাহীর ঘোড়ার গাড়ি

রাজশাহী মহানগরীর আদি যানবাহন ঘোড়ার গাড়ি (টমটম ) যা এককালে জমিদার ও তার কমর্চারীদের প্রধান যানবাহন ছিল তা আজ হারাতে বসেছে।

রাজশাহীর সাহেববাজার এলাকায় মঙ্গলবার দুজন কোচোয়ান (এক ঘোড়ায় টানা এই টমটমের চালককে বলে কোচোয়ান)-এর সাথে কথা হয় হ্যালোর। তিন পুরুষ ধরে এই পেশায় আছেন বলে জানান নূর বক্‌শ (৭০) ও নূর মোহাম্মদ (৬৫)।

“শুধুমাত্র সংসার চালানোর দায়েই নয়, পৈতৃক এই পেশাকে বৃদ্ধ বয়সে এসে হারাতে চাই না বিধায় শতকষ্ট সত্ত্বেও এই পেশা ছাড়তে পারছিনা”, বললেন নূর বক্‌শ। 

তাদের দুজনেরই আদি ও বর্তমান নিবাস নওহাটা পৌরসভার মথুরা গ্রামে।

নূর বক্‌শ জানান, তার বিয়ে হয় দেশ স্বাধীনের (১৯৭১) বছর এবং তিনি বিয়ের আগে থেকেই এই পেশায় নিযুক্ত হন বাবা বকুল মণ্ডলের হাত ধরে।

তিনি আরও জানান, তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। কিন্ত ছেলেরা আর এই পেশায় আসতে চায় না।

তারা বলে, “এ পেশায়  আয়-রোজগার কম।”

অপরদিকে নূর মোহাম্মদের অবস্থাও একই রকম। তিনি বলেন, একসময় তাদের মথুরা গ্রামে ২৮টিসহ রাজশাহী নগরীতে প্রায় শতাধিক টমটম গাড়ি ছিল।

১৯৫১ সালে পৌরসভা প্রথম পা-চালিত রিক্সা চালু করলে টমটমের ব্যবহার কমতে থাকে। তখন থেকে নগরীতে টমটমের সংখ্যা কমতে কমতে এখন দাড়িয়েছে মাত্র ৬টিতে। যা বিলুপ্তর পথে। 

তারা আরো জানান, এই পেশায় আমাদের ছেলেরা কেউ আসতে চায় না বলে সেই গ্রামের বর্তমান কোচোয়ান সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে তাদের এই দুই জনে।   

তারা টমটম চালান নওহাটা পৌরসভা থেকে সাহেব বাজার পর্যন্ত।

টমটম থেকে প্রতিদিন আয় হয় ১৫০-২৫০ টাকা। যা দিয়ে বর্তমান সময়ে সংসার চালানো খুব কষ্টকর।

এখন তাদের মনে হয় কোচোয়ানরা তাদের নিজেদের পরিচয়ই হারিয়ে ফেলছে। একসময় এটিই প্রধান যানবাহন থাকলেও এখন আর এর চল খুব একটা নেই।

তবে বিভিন্ন রকম উৎসব যেমন, পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা শখ করে ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়।  

এই তো গেল তাদের নিজেদের এবং পরিবারিক জীবনের কথা। এবার জেনে নেওয়া যাক ঘোড়ার প্রতি দিনের খাবারের কথা। ঘোড়ার খাবার হিসেবে তাদের প্রতিদিন মোট ১ কেজি ছোলা, ৫ কেজি ধানের কুঁড়া, ১ কেজি গমের ভুষি, ও ১ কেজি লালিগুড় কিনতে হয়।

আর এইসব খাবারের দিনের মোট খরচ প্রায় ১২৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা।

কোচোয়ানদের রোজগারের এই টাকা শুধুমাত্র ঘোড়াকে খাওয়ানো আর সংসার চালানোতেই খরচ হয় না বরং এ গাড়ি চালাতেও তাদের ট্যাক্স গুণতে হয় বছরে ১৫০ টাকা।  

“আমাদের সাথেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে যুগ-যুগ ধরে চলে আসা এই টমটম চালানোর পেশা।

বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি এখনও কৌতূহলের বিষয় হলেও ভবিষৎ প্রজন্ম হয়ত আর দেখবে না এই টমটম গাড়ি। জানতেও পারবেনা এই টমটমের কথা জানান, নূর মোহাম্মদ ও নূর বক্‌শ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com