আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ

স্বর্না জাতের আমন ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নীলফামারীর কৃষকরা।

লেট ভ্যারাইটি হিসাবে পরিচিত এই ধান ১২৫ দিনেই কৃষকদের ঘরে উঠার কথা থাকলেও কারেন্ট পোকা, মাজরা পোকা ও খোলপোড়া রোগে  ধান গাছ বিবর্ণ হয়ে গেছে।

হঠাৎ আক্রমণে কৃষি বিভাগের সহযোগীতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।  

জেলার সোনারায় ইউনিয়নের বেড়াকুঠির কৃষক মনির উদ্দিন জানান, তিনি এবার স্বর্না জাতের আমন ধান পাঁচ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। দুই বিঘাতেই কারেন্ট পোকা ও  মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে।

জানান, কারেন্ট পোকা ধান গাছের গোড়ার রস চুষে খায় এতে ধান গাছগুলো শুকিয়ে গেছে।

অপর দিকে একই ক্ষেতে মাজরা পোকা ধান গাছের উপরে ধানের থোর ও পাতা গুলো কালো করে  ফেলছে। যা দেখলে মনে হয় ধান ক্ষেতে কেউ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে বার বার ধর্না দিয়েও কোন সহযোগীতা পাওয়া যাচ্ছেনা।

তাই  নিজেরাই বাজারের কীটনাশক দিয়ে পোকার আক্রমণ ও বিভিন্ন ধরনের রোগ  ঠেকানো চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতে কেউইও সফল হচ্ছেন না।

একই এলাকার আজগার আলী জানা, তিনি সাত বিঘা জমিতে স্বর্নাজাতের আমন ধান আবাদ করেছেন। তারও তিন বিঘা জমির ধান কালো হয়ে গেছে।

কৃষক দুলাল জানান, তার চার বিঘা স্বর্না ধানের একই অবস্থা। এখন এসব ক্ষেতে ধান পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

সদর উপজেলার পালপাড়া, জয়চন্ডী, কুখাপাড়া, জাকীরগঞ্জ, উত্তর এলাকার শত শত কৃষকদের একই অবস্থা।

জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক আমিনুর মিয়া জানান, তিনি গত বছর স্বর্ণা জাতের আমন আবাদ করে বিঘা প্রতি ২৫ মন করে ধান পেয়েছিলেন। এবার তিনি ছয় বিঘা জমিতে এই ধান আবাদ করে লোকসান গুনছেন। তার ছয় বিঘা জমির ধানই কারেন্ট ও মাজরা নষ্ট করেছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, এবার নীলফামারীর ছয়টি উপজেলায় আমনের চাষ হয়েছিল এক লাখ ১০ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির স্বর্না ধান ওই পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়তে গেছে।

এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দেখাই মিলছেনা বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান, সোনারায় ইউনিয়নের মাজরা বা কারেন্ট পোকার আক্রমনের বিষয়টি ঠিক নয়। সেখানে খোলপোড়া রোগ দেখা গেছে। এতে উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, এই জাতের ধানটি বাংলাদেশের অনুমতি যোগ্য নয়। ভারতের বীজ । এটিতে উৎপাদন বেশী হয় বলে কৃষকরা এই ধানের আবাদ করে। তবে খোলপোড়া রোগ তাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে কিশোরীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা  রেজাউল ইসলাম জানান, কিছু এলাকায় পোকার আক্রমণ ছিল এখন নেই।  

কৃষি সম্প্রসারণের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াজেদ আলীর বলেন," বিষয়টি জেনেছি।

"রংপুরের ধান গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সহিদুল ইসলামকে গত বৃহস্পতিবার নীলফামারী নিয়ে এসে আক্রান্ত ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়েছিলাম।

"তিনি পরীক্ষা করে জানান এটি কারেন্ট, মাজরা পোকা ও খোলপোড়া রোগ নয়। এটিকে টুংরো রোগ বলে।"

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com