ভোগান্তি নিয়ে ভালোবাসার পথে

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। সেই সাথে কমলাপুর রেল স্টেশনে বাড়ছে ভীড়। নানান ভোগান্তি সয়েও বাড়ির পানে ছুটছেন মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠেও বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে।
ভোগান্তি নিয়ে ভালোবাসার পথে

বৃহস্পতিবার ছিল ঈদ-উল-ফিতরের আগে শেষ কর্মদিবস। তাই শুক্রবারে প্রচণ্ড ভীড় ছিল রেল স্টেশলগুলোতে। শনিবারও ছিল ঘরমুখো মানুষের ঢল।

প্রতিবারের মতো এবারও  বড় একটা ভোগান্তি ছিল ট্রেনের বিলম্ব। শনিবারেও দেখা  তা। সকাল নয়টায় রংপুরের উদ্দেশ্যে যে ট্রেন ছাড়ার কথা, সেটা ছেড়েছে দুপুর একটার পর।

সেই ট্রেনের যাত্রী রনি। তিনি জানান, তিন ঘণ্টা ধরে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছেন। তবু এত ভোগান্তি সহ্য করছেন মা-বাবা আর ভাই-বোনদের সাহে ঈদ পালনের জন্য।

রনির মতো অপেক্ষায় আছেন জয়নুল আবেদীনও।

তিনি বলেন, “ট্রেনগুলো যেন যথাসময়ে ছেড়ে যায় সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।”

ট্রেনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন শাফিন নামের একজন। হ্যালোকে বললেন তার ভোগান্তির কথা।

তিনি বলেন, “ট্রেন নয়টায় আসার কথা। দুপুর বারোটা বাজে। সে ট্রেন এখনো এসেই পৌঁছায়নি।”

তিনি জানান, প্রতি বছর বাসে যাতায়াত করেন। কিন্তু যানজটের কারণে এবার বেছে নিয়েছেন ট্রেন। 

রাজশাহীর যাত্রী মাহবুবের ট্রেন আসার কথা ছিল সকাল দুপুর ১২ টায়। কিন্তু ১২ টা ৩৪ এ তার সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো ট্রেন পৌঁছায়নি।

তিনি বলেন, “কতক্ষণ দেরি করবে সেটা বলা যাবে না। এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণাও পাই নাই।”

প্রতিবছরই ট্রেনে যাতায়াত করেন তিনি। মাঝেমধ্যে এরকম সময় বিপর্যয় ঘটে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “ টিকিট কাটতেও অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক লম্বা লাইন ছিল। গতবারের চেয়ে কষ্টটা একটু বেশি। মানুষ বেড়েছে তো। চাপও বেড়েছে।”

 আরিফ নামের আরেক যাত্রী বলেন, “পরিবারের সবার সাথে ঈদ করব, এ কারণেই এত ভোগান্তির পরেও যাওয়া।”

পরিবারের আরেক জন শাপলা। কোলে দুই বছরের শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

সপরিবারে ঈদ করতে রংপুর যাচ্ছেন আলী আহমেদ।

তিনি বলেন, “ট্রেন নাকি নষ্ট হয়েছিল। ঠিক করে রওনা হতে হতে সাড়ে ছয় ঘন্টা লেট। তারপর দেখলাম সম্ভাব্য সময় বলেছে ১২ টা ৪০। একটা পার হয়ে গেল, ট্রেন আসেনি।”

প্রতি বছর বাড়ি যাওয়া হয় না তার। এবারই প্রথম ট্রেনে করে বাড়ি ফেরা। তার স্ত্রী শাহানা আলম বলেন, “প্রথম বারের যে অভিজ্ঞতা! এবারই প্রথম, এবারই শেষ।”

তবে সব ছাপিয়ে গেল ঈদের আনন্দ। আলি আহমেদ বলেন, “আসলে বাড়ি যাচ্ছি। সবার সাথে ঈদ করব। এতে ভাল লাগছে।”

দুই ছোট ছেলেকে শায়েখ ও সৌমিককে নিয়ে বসে আছেন শাহানা আলম। তিনি বলেন, “কষ্ট হচ্ছে ঠিক আছে। ভালোও লাগছে।”

সৌমিক জানায়, সে কয়েক ঘণ্টা ধরে বসে আছে এখানে। খারাপ লাগলেও প্রথমবারের মতো ট্রেনে ওঠার আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে।

হ্যালোর সাথে কথা হয় স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তীর। রংপুর এক্সপ্রেসের দীর্ঘক্ষণ বিলম্ব নিয়ে তিনি বলেন, “রংপুর এক্সপ্রেস গতকাল যাওয়ার সময় আড়াই ঘন্টা দেরি করেছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। ছাদে আর বাফারে অনেক মানুষ থাকায় পথে আবার গোলযোগ দেখা দেয়। এ কারণে ট্রেনটি আসতে দেরি হচ্ছে। এ ট্রেনটিই বিলম্ব হচ্ছে, অন্যগুলো যথাসময়ে আজ ছেড়ে গিয়েছে।” 

গত বছরের চেয়ে অবস্থা অনেক ভালো বলে দাবি করেছেন তিনি।

যাত্রীর প্রচুর চাপ রয়েছে বলে জানান সিতাংশু। রোববার সকাল পর্যন্ত চাপ থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

ঝুঁকি নিয়ে অনেকে উঠছে ট্রেনের ছাদে। এ নিয়ে তিনি বলেন, “লিফলেট ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সবাইকে জানাচ্ছি যেন ছাদে না উঠে। এতে জীবনের ঝুঁকি আছে। এখানে যাত্রী নিজেও জানে। যাত্রীরা সচেতন না হলে কিছু করার থাকে না।”

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com