'ঘর তো নয় পাখির বাসা'

বৃষ্টি হলেই ভিজে যায় ঘরের ভেতরের সব কিছু। ঝড় হলে তো কথাই নাই। ঘরদোর বলে যা কিছু বোঝায়, ওলট পালট হয়ে যায়।
'ঘর তো নয় পাখির বাসা'

ছোট্ট এক ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস।  রাজধানীর খিলগাঁও বস্তির অবস্থা এমনই।

ছোট্ট একটা ঘরে ছয়-সাত জন মিলে থাকে। পলিথিন, টুকরো টিন দিয়ে কোনোমতে বানানো সেই ঘর। একেক সারিতে দশ থেকে পনেরোটি ঘর। সবগুলোর চেহারা একই রকম।

এরকম এক ঘরের বাসিন্দা রওশন আরা বেগমের সাথে হ্যালোর কথা হয়।

তিনি জানালেন অনেক বছর ধরে এখানেই বসবাস। পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে তার। বস্তিতে তার সাথে থাকে তিন সন্তান। চারজন ঘুমান এক বিছানায়।

'ঘর তো নয় য্যান পাখির বাসা,' বলেন রওশন আরা।

রওশন আরা গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান। ‘অনেক দিন যাবৎ এহানে থাকতাছি। অনেকবার উঠাইয়াও দেছে’, অভিযোগের সুরে বললেন।

তার মেয়ে শান্তা  পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। একজন মাঝে মাঝে বস্তিতে এসে বিনামূল্যে শিশুদের পড়ান। তার কাছে শান্তা আর তার ছোটো বোন পড়ে।

সন্তানদের পড়াশোনা করানোর ইচ্ছা রওশন আরার।  তিনি বলেন, ‘তারা যদি পড়তে চায়, আমি পড়ামু।’

খাবার জোগাড়ে হিমশিম খেতে হলেও সন্তানদের দিয়ে কাজ করাতে চান না তিনি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা পেতেও কষ্ট হয় পরিবারটির। তিনি বলেন, ‘কেউ অসুস্থ হইলে হাসপাতালে নিতে পারি না। এখানে অল্প পয়সায় ছোটোখাটো ডাক্তার দেখাই।’   

শান্তা বলে, ‘আমি ক্লাস টুতে পড়ি। আমার পড়ালেখা করার ইচ্ছা আছ।’ ডাক্তার হতে চায় ও।

‘আমি ডাক্তার হইলে সবার চিকিৎসা করুম। তখন তো আর ওষুধের জন্য টাকা লাগবো না।’ 

ও জানায় তার অনেক বান্ধবী পড়ালেখা করে না। এদের কেউ টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারে না। কেউ আবার পড়ালেখা করতে চায় না। 

একই এলাকার অন্য একজনের পাঁচ সন্তান। এর মধ্যে ১১ বছর বয়সী মেয়ে সুমা কাজ করে রাজারবাগের একটি বাসায়। আট বছর বয়সী সুমন থাকে মায়ের সাথেই। 

পড়ালেখায় সন্তানদের আগ্রহ কম বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, "পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ কম। একটা কাজে ইচ্ছা না থাকলে তাকে ধাক্কা দিয়ে তো করানো যায় না। পড়ালেখা করাইতে হইলে যেই সময় দেওয়া প্রয়োজন ওটাও আমি দিতে পারি নাই। কাজ করতে করতেই সময় চইলা যায় আমার।" 

ইট ভেঙে সংসার চালান নিলুফা আক্তার। তার তিনজন সন্তান। সন্তানদের পড়াতে চাইলেও সামর্থ্য নেই তার। তিনি বলেন, "ইট ভাইঙ্গা সংসার চালাই। বাচ্চাদের পড়ালেখা শেখানোর ইচ্ছা আছে। কিন্তু টাকা-পয়সার কারণে করাইতে পারি না।" 

কোনো নিশ্চয়তা নেই পরিবারগুলোর। কিছুদিন পরপরই উঠিয়ে দেওয়া হয় তাদের। অনেক সময় 'না জানিয়ে' উচ্ছেদ করা হয় বলে অভিযোগ তাদের। উঠিয়ে দেওয়ার পর নতুন থাকার জায়গার ব্যবস্থাও করা হয় না বলে জানান তারা।

বারবার উঠিয়ে দেওয়ার পরেও এখানেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন একজন, "আর থাকার জায়গা কই?"

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com