এখনো অনেকে প্রেম-ভালোবাসার জন্য পত্রিকার শিরোনাম হন। আর এই প্রেম নিয়ে কিশোরদের ভাবনা জেনেছে হ্যালো।
নর্দান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘ও ’ লেভেল পড়ুয়া তামান্না মান্নান অতশীর মতে, ভালোবাসা হলো পবিত্র একটা জিনিস।
অতশী বলে, “বর্তমান প্রজন্মের অনেকে প্রেম করাকে ফ্যাশন হিসেবে নিয়েছে, আবার অনেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্যও প্রেম-ভালোবাসায় জড়াচ্ছে, এটা বেশ ভালো।”
সময় হলে ভালোবাসায় জড়ানোর ইচ্ছে আছে বলে জানায় ও।
১৮ বছর বয়সের আগে প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ভাবা ঠিক নয় বলে মনে করে নবম শ্রেণি পড়ুয়া আজমল তানজিম সাকির।
কারণ হিসেবে সাকির বলে, “এই বয়সে আবেগ দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।”
এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তনুশ্রীর প্রেম নিয়ে ভাবার সময় নেই। নিজেকে বাস্তববাদী দাবি করে ও বলে, “আমার কাছে ক্যারিয়ারটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি জীবন গড়ার ঠিক শেষ ধাপে।
“এখন যদি মনটা অন্য দিকে চলে যায় তাহলে জীবনটা এখানেই থেমে যাবে। লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না হয়তো।”
তাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রেম নিয়ে ভাবতে চায় গোপালগঞ্জের মেয়ে তনুশ্রী।
আর প্রেম-ভালোবাসা বিষয়টাকে একটু আলাদা চোখে দেখে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে ছাত্র ওমর ফারুক। কারণ হিসেবে ফারুক বলে, অল্প বয়সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কেউ ভালো আছে এমন কথা শুনিনি।
‘শুনেছি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অনেক ছেলে মাদকে আসক্ত হয়।’
তবে সময় হলে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর ইচ্ছে আছে তার।
বাবা-মার শাসনে জালে প্রেম-ভালোবাসার ইচ্ছে থাকলেও সেটাকে চেপে রেখেছে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিব হাসান।
ও বলে, “আমার অনেক বন্ধুই প্রেম করে। আমার ইচ্ছে হয় কিন্তু ভয়ে কাউকে প্রেম নিবেদন করতে পারি না। যদি বাবা-মাকে বলে দেয়।”
সুযোগ পেলেই প্রেমে জড়াবে বলে জানায় সাকিব।
পরিকল্পনা করে প্রেমে জড়ানোর ইচ্ছে নেই এইচএসসি পড়ুয়া সাদিক ইভানের। ও বলে, “হুটহাট সম্পর্ক হয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী আমি। যখন যা মনে হয় তখন তাই করি। এ ক্ষেত্রেও ভিন্ন নয়।”
এ বিষয়ে মনোবিদ রউফুন নাহারের সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর।
তিনি বলেন, “মনোসামাজিক বিকাশের তত্ত্ব অনুযায়ী একজন মানুষের জীবনে প্রেম-ভালোবাসা বা অন্তরঙ্গতায় আসার মোক্ষম বয়স হচ্ছে ২০ থেকে ৩৯ বছর। তার মানে এই নয় যে এর আগে বা পরে কোনো মানুষের জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসবে না।
“মূলত কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল এমন একটি সময় যখন কিশোর-কিশোরীরা মাত্র যৌবনে পা রাখতে শুরু করে। এসময় তাদের নানারকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয় যা তাদেরকে ধীরে ধীরে কিশোর-কিশোরী থেকে নারী-পুরুষে পরিণত করে।"
কৈশোরে প্রেম ভালোবাসা বা অন্তরঙ্গতার ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষা খুব স্বাভাবিক বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ধরনের অনুভূতি বা ইচ্ছে দোষের কিছু নয়। বরং কৈশোরে প্রেম-ভালবাসার অনুভূতি একজন কিশোর বা কিশোরীকে জানান দেয় যে তার বিকাশ থেমে নেই, সে বিকাশের একটি ধাপ অতিক্রম করে আরেকটি ধাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “সেই সাথে বলে রাখা ভালো অনুভূতির দোষ-গুণ বা ভালো-মন্দ না থাকলেও আচরণের ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। তাই নিজের জন্য ক্ষতি হবে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকাই ভালো।"
এক্ষেত্রে পরিবারের বড়রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাবা-মা বা বড়রা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে পরিবারের কিশোর বা কিশোরীটিকে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ করে দিতে পারেন। এসময় বড়রা পাশে থাকলে হেলদি ডিসিশন বা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঠাকুরগাঁও।