তিনি নিজ গ্রামে ৫০.৮৬ একর জমির উপর গড়ে তুলেছেন দেশের বৃহত্তম মাল্টা বাগান। তার বাগানে ২১ হাজার মাল্টা গাছের পাশাপাশি রয়েছে আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ফল গাছ।
সরেজমিনে জানা যায়, গত বছর মাল্টার বাগান করলেও এ বছরই তার বাগানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ গাছে মাল্টা ধরেছে। এখান থেকেই তার বাগানের খরচ অনেকটাই উঠবে বলে আশা করেন তিনি।
জানা যায়, বিদেশী মাল্টার তুলনায় বেশ রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এসব বাগানের মাল্টার চাহিদাও অনেক। প্রতি কেজি মাল্টা পাইকারি ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, খুচরা ১৪০- ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২০১৪ সালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তাকে মাল্টা তথা দেশীয় ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে জানা কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া হুমায়ুন।
তিনি বলেন, দুই বছর আগে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি (হজমজনিত সমস্যা) রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান। চিকিৎসার জন্য তাকে সেখানে কয়েক মাস থাকতে হয়। তিনি দেখেন থাইল্যান্ডের ফলগুলো একেবারে তাজা। বিষমুক্ত বিভিন্ন ফল তিনি নিশ্চিন্তে খেয়েছেন। এখান থেকেই তিনি ফল চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ হন।
হুমায়ুন বলেন, "বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফলগুলোতে বিভিন্ন প্রকার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এই ফলগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
"দেশের মানুষকে বিষমুক্ত ফল উপহার দেওয়ার জন্য ফল চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
এ অঞ্চলে মাল্টা চাষকে ছড়িয়ে দিতে এ বছরই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এক লক্ষ মাল্টা চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। বর্তমানে তার বাগানে ৩০ জন লোকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন।
পিরোজপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান জানান, অন্য ফসল সর্বোচ্চ ডিএস চার মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে। কিন্তু মাল্টা গাছ সর্বোচ্চ ১২ ডিএস মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে। তাই পিরোজপুরে লবণাক্ত
পিরোজপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন তালুকদার জানান, চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করছেন। জেলায় বর্তমানে ৪৫ হেক্টর জমিতে তিনশ ১৯টি মাল্টার বাগান তৈরি করা হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাল্টার কলম করা হয় বাতাবি লেবু গাছের সাথে। আর পিরোজপুরের মাটি বাতাবি লেবু ও মাল্টা চাষের জন্য খুব উপযোগী।
সম্প্রতি কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান হুমায়ুনের এই মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেছেন।
তিনি জানান, পিরোজপুরে হুমায়ুনের মাল্টা বাগান সারাদেশের ফল চাষীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। এটি এই মূহুর্তে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাল্টা বাগান।
তিনি আরও জানান, পিরোজপুরে যেভাবে মাল্টার বিপ্লব ঘটছে, তা সারাদেশে সম্প্রসারিত হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও মাল্টা রপ্তানি করা সম্ভব।
সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে কোন দেশীয় ফল থাকে না বললেই চলে। সে কারণে এ সময় বাজারে মাল্টার চাহিদাও ব্যাপক।