দৃষ্টিহীন শিক্ষক আলো জ্বালিয়ে চলেছেন

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ফারুক!

রোববার বিদ্যালয় চলাকালে তৃতীয় শ্রেণির আম্বিয়া হ্যালোকে বলে, 'ফারুক স্যার আমাদের সবার প্রিয়। উনার পড়ান ভালো লাগে বলেই নিয়মিত স্কুলে আসি।'

'স্যার চোখে দেখতে পান না। কিন্তু এত সুন্দর করে আমাদেরকে পড়া বুঝিয়ে দেন যে কেউ না জানলে বুঝতেই পারবে না, স্যার দেখতে পান না,' বলে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া শামীম।

প্রধান শিক্ষিকা জীবন নেছা জানান, শিক্ষক ফারুকের ক্লাস নেওয়ার পদ্ধতি অবাক করার মত। তার কারণেই স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি। তার ইচ্ছাশক্তি প্রখর। স্কুল থেকে তাকে সব রকম সহযোগিতা করা হয়।

বালিয়া এলাকার মিজানুর রহমান জানান, দৃষ্টিশক্তিহীন ফারুক এই এলাকার গর্ব। ইচ্ছে থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

পরিচিতরা জানান, তিনি চোখে দেখেন না তবু একাকি পথ চলেন। বাজার করাসহ সব কাজ নিজে করেন। পথে পরিচিত কেউ কথা বললে ঠিকঠাক চিনেও ফেলেন।

জেলার সদর উপজেলার ভূল্লী বালিয়া এলাকায় তার বাড়ি। ৩৫ বছর বয়সী মানুষটি সব প্রতিবন্ধকতা জয়ের জীবন্ত এক উদাহরণ। এলাকার মানুষের প্রিয় শিক্ষক।  

নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। সুচিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে পড়েন।

দৃষ্টি শক্তি হারানোর পর পরিবারের উৎকণ্ঠা ও হতাশার মাঝেই শুরু হয় ফারুকের পথ চলা। পাঁচ বছর পর ২০০১ সালে তিনি জানতে পারেন দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলেও লেখাপড়া করা যায়।

দিনাজপুর জুবিলি স্কুল রির্সোস সেন্টারে মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে পড়া শুরু করেন। এরপর ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেন। এরপর বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন।    

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। পাশেই বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, শিক্ষার্থীরা মনযোগ দিয়ে শিক্ষকের কথা শুনছে। শিক্ষক ফারুক এমন ভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝাচ্ছেন যেন দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com