‘এক ট্যাকাও বেতন পাইছি না’

ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে কুরবানির ঝামেলা শেষ করে খেয়ে দেয়ে বিকালে বেড়াতে বের হলাম। যে রিকশায় উঠলাম তিনি গল্প শুরু করলেন তার জীবনের। আমারও তাড়া ছিল না। শুনতে লাগলাম ধৈর্য ধরে।

তার নাম  ইকবাল হোসেন। বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার সিরাজনগর নয়াচর এলাকার দক্ষিণ পাড়ায়। আগে ছিলেন সম্পন্ন চাষি। এখন সব হারিয়ে রিকশা চালান। ঈদে গ্রামে এসেছেন। কিন্তু তার মতো রিকশা চালকের আবার আনন্দ কী? দুটো পয়সা আসবে রিকশা চালালে তাই ভাড়ার রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন ঈদের দিনেও।

এক সময় স্ত্রী আর চার মেয়ে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। মেয়েরা স্কুলে পড়তো। এখন শহরের এক বস্তিতে থাকেন ছোট দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে। বড় মেয়েদুটিকে আত্মীয়ের বাড়ি রেখে পড়াচ্ছেন। 

তার জ্যাঠাতো ভাইয়ের পরামর্শে বিদেশ যাবার জন্য ধার নিয়েছিলেন। কথা ছিল, চার লাখ টাকা দিতে পারলে লিবিয়া গিয়ে চাকরি পাবেন।  

বেশি সুখের আশায় টাকা ধার করে ইকবাল বিদেশে যেতে পেরেছিলেন, তবে লিবিয়ায় নয়। তিনি সে দেশে গিয়ে জানতে পারেন, সে দেশের নাম নেপাল।  

সে দেশেও টাঙ্গাইলের এক দালালের অত্যাচারে দু মাস পর দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন।   
"অনেক কষ্ট করছি বাবা, খাওয়া দাওয়া ঠিকমতন হয় নাই। আর এক ট্যাকাও বেতন পাইছি না”, বলে তিনি কেঁদে ফেললেন আমার কাছে।

দেশে ফিরে ধারের টাকা শোধ করতে ভিটেটুকু বন্ধক দিতে হয়। তাতেও দেনা শোধ হয়নি। প্রতিবেশি শাহদাতের কাছে ৯০ হাজার টাকার ঋণ এখনও শুধতে বাকি। তবু পরিবারের অনুরোধে এই ঈদে সেই বন্ধকী ভিটেতেই এসে উঠেছেন। আর মেয়ে দুটোর সাথেও দেখা হবে! 

রিকশা টেনে সংসার চালাবেন না ঋণ শোধ করবেন, এই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারিনি। ভাড়া দিয়ে নেমে গেলাম। তার বলা কথাগুলো মনের ভেতর ঘুরপাক খেতে লাগলো। ইকবাল নামের এই রিকশা চালকের জীবনে যা ঘটেছে, আমাদের দেশের অনেক মানুষ এই দুর্বিপাকে পড়ে পথে বসেন এ তো প্রায় প্রতিদিনের সংবাদ!        

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com