শিশুর নেতিবাচক বিকাশের দায় আপনজনেরই

পরিবারের সদস্যদের কিছু আচরণ শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন মনোবিদ ড. মাহজাবিন হক।

শিশুদের বড় হয়ে ওঠা ও বিকাশ নিয়ে হ্যালোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। শিশুদের শৈশব, কৈশোর ও বয়ঃসন্ধি নিয়ে নানা আলোচনা হয় তার সঙ্গে।

আমিঃ পরিবারের সদস্যদের কী ধরণের ভুল শিশুর মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে?
ড. মাহজাবিন হকঃ পরিবারের মানুষরা অজান্তেই কিছু ভুল করে থাকেন। যেমনঃ মারধর করা, শিশুকে পাত্তা না দেয়া বা তাকে সবসময় কড়া শাসনে রাখা। অনেকে বলে থাকেন, সন্তানের ভালোর জন্যই মারধর বা শাসন করে থাকি। আবার অনেক সময় শিশুরা কোনো একটা কথা কাউকে না বলতে অনুরোধ করলেও আমরা সেই অনুরোধ উড়িয়ে দেই। তার অনুরোধ না মেনে উল্টো হাসতে হাসতে অন্যকে বলে ফেলি। এটা শিশুর মানসিকতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আমিঃ নেতিবাচক প্রভাব কী ধরণের হতে পারে?
ড. মাহজাবিন হকঃ যদি কোনো বাবা-মা তার সন্তানকে মারধর করে তখন সন্তানের মনে তার বাবা-মার জন্য আর সম্মান থাকে না। আর তারা ভাবে এটাই সঠিক। ফলে বড় হয়ে দেখা যায় তারাও শিশুদের বা ওর চেয়ে কম বয়সীদের মারে। এটাই কিন্তু হচ্ছে। অনেক সময় আমরা তাদের কথা উড়িয়ে দিই, অবজ্ঞা করি। এর ফলে তারা আত্মবিশ্বাস ও উদ্যম হারিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে তারা ভুল কিছু বললে আমরা ভালোভাবে না বুঝিয়ে 'গাধা' বা বিভিন্ন ধরণের বাজে কথা বলি। এগুলো তাদের উদ্যম নষ্ট করে দেয়। তারা প্রিয়জনের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।

আমিঃ শিশুকে শাসন করার ক্ষেত্রে আপনার কি মতামত?
ড. মাহজাবিন হকঃ শাসন করা মানেই সন্তানকে মারধর করা নয়। শাসনের ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় খেয়াল রাখা বেশ জরুরি। একটি হলো শাসন যেন অতিরিক্ত না হয় ও এটি যেন তার মানসিকতার উপর কোনো বাজে প্রভাব না ফেলে।

আমিঃ সন্তান পালন নিয়ে তো বাবা-মার কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সে ক্ষেত্রে বাবা মার কী করা উচিত? বা তাদের প্রতি নির্দেশনাগুলো কী?

ড. মাহজাবিন হকঃ ঠিক। বাবা-মার কাঁধে অনেক বড় একটি দায়িত্ব থাকে। কিন্তু অনেক বাবা-মা জানেন না সে দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হয়। এ নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যখন কেউ সন্তান নেবার চিন্তা করবে তখন থেকেই শিশু সঠিকভাবে লালন-পালনের পদ্ধতি জানা উচিত।

আমিঃ অনেক সময় শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। এগুলো তাদের মানসিকতার কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?

ড. মাহজাবিন হকঃ কোনো সন্তান যৌন হয়রানির শিকার হলে অনেক বাবা-মা তা সমাজ থেকে ঢেকে রাখতে চান। এতে করে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। আমি মনে করি, অপরাধীরা ভীতু। তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। তাহলেই যৌন হয়রানি বন্ধ হবে।

অনেক বাবা-মা তার সন্তানের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে শিশু অস্বস্তিতে ভুগতে পারে। বাবা-মা এর কারণ হিসেবে দাঁড় করায়,“অন্যদের সাথে তো এমন কিছু হয়নি, তোমার সাথে কেন হলো? নিশ্চয়ই তোমার কোনো দোষ আছে”। এটা শিশুকে হেয় করে।

আমিঃ এক্ষেত্রে কি করণীয়?

ড. মাহজাবিন হকঃ বাবা-মাকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। আপন চাচা হোক বা আপন মামা, যেই হোক অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। আর ছোট থেকেই সন্তানকে বোঝাতে হবে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।

আমিঃ  এক সময় শিশুরা বয়ঃসন্ধিকালে পা দেয়। তখন অনেকেই বিভিন্ন ধরণের মানসিক সমস্যায় ভোগে। এ সম্পর্কে আপনার কি মতামত?

ড. মাহজাবিন হকঃ প্রত্যেকের উচিত বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা ও স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া। এসময় কিশোর-কিশোরীদের নানা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। পূর্ণ ধারণা না থাকলে তারা এ ব্যাপারে ভীত হয়ে উঠে। ভাবে সে কোনো একটি পাপের কাজ করে ফেলছে। সে অনুশোচনা আর বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও পরিবারের ভূমিকার বিকল্প নেই।

আমিঃ আপনাকে কেমন শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়েছে?

ড. মাহজাবিন হকঃ তেমন কোনো সমস্যার মাঝে আমার পড়তে হয়নি। আমার বাবা এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতেন। কোনো ভুল করলে মাঝে মাঝে মা একটূ রাগারাগি করলেও বাবা আমাকে আদর করে বোঝাতেন। আমার ছোটোবেলা মাত্র একটি কড়া নিয়মের মধ্যে দিয়েই গিয়েছে। সেটি হলো রাত সাড়ে আটটার পরে আর জাগা যাবে না। আজকালের শিশুরা হয়তো বিশ্বাস করবে না। কারণ তারা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে।

টিভি দেখার জন্য জেগে থাকতে চাইতাম কিন্তু শেষমেশ সাড়ে আটটাতেই বিছানায় যেতে হতো। এছাড়া আমি ছোটোবেলায় খুব প্রশ্ন করতাম, বাবা আমাকে কখনো থামাতেন না। বাবা বলতেন," শিশুরা প্রশ্ন করলেই তো জানতে পারবে।"

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com