অনেক কাজ করে হলেও বোনকে পড়াতে চায়

সেদিন স্কুল থেকে ফিরছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে ডরাটানার মোড়ে আসতেই দেখা হল সিয়াম রহমান নামের এক শিশুর সঙ্গে।

ওর সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হল এমন চমৎকার মনের শিশু আগে দেখি নি।

ও যশোর শহরে ইজি বাইক চালায়। ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য একটু সময় চেয়ে নিলাম। খুশি মনে কথা বলতে রাজি হয়ে গেল।

কথায় কথায় জানলাম, ও আগে স্কুলে পড়ত। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে কাজে নামতে হয়েছে ১২ বছর বয়সী সিয়ামকে।

মা ও বোনের সঙ্গে যশোরের  শংকরপুরে থাকে সে। মা অন্যের বাসায় কাজ করে। ও মাত্র তিনমাস ধরে ইজি বাইক চালানো শুরু করেছে।

প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়, আর ফেরে রাত আটটায়। সারাদিন কাজ করতে হয় বলে লেখাপড়া করতে পারে না সিয়াম। নয়ত ওর পড়ার বেশ ইচ্ছে ছিল।

মা আর ওর রোজগারেই মোটামুটি নিজেদের খাওয়া পরা চলে ওদের। তাই কাজ করতে হয় ওকে।

কিন্তু নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও, সে চায় ছোট বোনকে পড়াশোনা শিখিয়ে অনেক বড় করে তুলতে।

সে বলে, ছোট বোনকে খুব ভালোবাসি। আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। কিন্তু অভাবের জন্য পড়তে পারি না। বড় চাকরি করার ইচ্ছা ছিল। নিজে পারি নি তবে বোনকে অনেক বড় মানুষ বানাবো। এজন্য বেশি বেশি কাজ করতে হলেও করবো। আমার মাও চায় বোন লেখাপড়া করুক। মা তো অনেক কষ্ট করেও আমাকে পড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের আর কোনো উপায় ছিল না বলেই কাজে নেমেছি।

কথা বলে বুঝলাম, ওর স্বপ্ন শেষ হয় নি। সে তার নিজের স্বপ্ন বোনকে দিয়ে পূরণ করতে চায়।

এতোটুকু শিশুর পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।  হঠাৎ আমার নিজের বোনের কথা মনে হলো। মনে হল আমারও তো দায়িত্ব থাকা উচিত বোনের প্রতি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com