পরিবারের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দিতে পড়াশোনা ছেড়ে যারা শিশু শ্রমজীবী হয়ে যায় সাকিব তাদেরই একজন। ওর সাথে সেদিন কথা হল আমার।
বাদাম বেচার কাজ ফেলে ও আমার সাথে কথা বলতে তেমন আগ্রহ দেখাল না। তবুও আমি ওর কাজের ফাঁকে ওর সাথে একটু কথা বললাম।
আমি: তুমি কোথায় থাকো?
সাকিব: এখন থাকি ঘোপে (যশোর)। আর দেশের বাড়ি ভৈরব।
আমি: তুমি এখানে কার সাথে থাক?
সাকিব: বাপ-মা, বড় ভাই আর বোনের সাথে।
আমি: তাহলে দেশের বাড়ি কে থাকে?
সাকিব: কেউ না। আবার কদিন পরেই চলে যাবো।
আমি: তোমার ভাই কি করে?
সাকিব: ভাইও বাদাম ব্যাচে।
আমি: আর বোন?
সাকিব: ও তো অনেক ছোট।
আমি: তোমার বাবা কি করে?
সাকিব: আব্বাও বাদাম ব্যাচে। কিন্তু তার শরীর খারাপ।
আমি: তোমার মা কোথাও কাজ করে?
সাকিব: না। আম্মা বোনরে নিয়ে বাড়ি থাকে।
আমি: তুমি কি সারাদিনই বাদাম বেচো?
সাকিব: না। শুধু বিকেলে।
আমি: তাহলে সকালে কি কর?
সাকিব: মসজিদে যাই।
আমি: মসজিদে কি কর?
সাকিব: মৌলবী সাহেবের কাছে পড়ি।
আমি: স্কুলে যাও না কেন?
সাকিব : যাবো কি কইরে? বাপের কাছে তো অতো টাকা নেই। বাপ কইছে দেশের বাড়ি গিয়েও মৌলবী সাহেবের কাছেই পড়তি হবে।
আমি: তুমি বাদাম বেচে প্রতিদিন কত টাকা পাও?
সাকিব: ওই দুই-তিনশ টাকা।
আমি: তাতে তোমাদের পরিবার চলে ? মানে কোনো কষ্ট হয় না?
সাকিব: না।
আমি: তোমার কিছু করতে ইচ্ছা করে, যেটা তুমি করতে পারো না?
সাকিব: আমার খেলতে খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু কেউ আমারে খেলতে নেয় না ।
আমি: তুমি বড় হয়ে কিছু করতে চাও ?
সাকিব: আমি বড় হয়ে নিজের একটা বড় দোকান বানাতে চাই।
হঠাৎ তাকে পেছন থেকে কয়েকজন বাদাম কেনার জন্য ডাক দিল। আমি তাকে আর আটকালাম না। তাকে কিছু টাকা দিয়ে বললাম, যাও তোমাকে ডাকছে। পরে আবার কথা হবে।