ওদের ভরসা কোথায়

অন্যান্য দিনের মত সেদিনও স্কুল ছুটির পর বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ আমার পথ আটকে দাঁড়াল ছোট্ট এক শিশু।

বয়স আর কত আর হবে? ৬ বা ৭ বছর। শিশুটির চোখ দুটি বেশ মায়াবী। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,''আফা একডা মালা লইবেন?''

হঠাৎ কেন জানি আমার ভেতরে স্তব্ধতা ভর করল। আমার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছিল না। মনে হল কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এইটুকু একটা ছেলে, যার এই বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা, তার বয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে খেলে বেড়ানোর কথা, সে কিনা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ফুলের মালা বিক্রি করছে?

ছেলেটি আবার বলল,''আফা, মালা লন, মাত্তর ১০ টেহা।''

স্কুলে যায় কিনা প্রশ্ন করতেই যাও ছেলেটি লাজুক হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল ''নাহ''। খুব একটা ধাক্কা খেলাম শুনে। এসব শিশুদের অনেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। না আছে আশ্রয়, না দু'বেলার খাবার। স্কুলের লেখাপড়া তো দূরের কথা। আমি আর কোনো কথা না বলে বাড়ি চলে এলাম।

আমার দেখা সেদিনের সেই ছেলেটির মত হাজারও ছেলে এদেশের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা যতই দাবি করি না কেন বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত দেশ, শিক্ষার হার বাড়ছে, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত তো নয়ই, প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও সবার জোটে না। যদি এই দেশ সত্যি দারিদ্রমুক্তই হত তবে দু'মুঠো খাবারের জন্য কাউকে কারো কাছে হাত পাততে হত না।

সরকার বিনা-বেতনে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামুলক করেছেন এবং বিনামূল্যে বই বিতরণ করেছেন। তারা ভাবছেন যে সব শিশুই এখন স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে। কিন্তু সব শিশুই কি স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে? যাদের খাবারেরই নিশ্চয়তা নেই তারা স্কুলে যাবে কি করে?

সব শিশুরই যদি শিক্ষা নিশ্চিত হত, দেশ থেকে দারিদ্র যদি সত্যিই দূর হতো, তাহলে ছোট্ট ছেলেটিকে সেদিন আর আমার সামনে হাত পেতে তার ফুলের মালা বিক্রি করতে হত না। তাই আমাদের সবার উচিৎ শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ান।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com