বর্তমানে মাদাগাস্কারে লেমুরের অনেক কম প্রজাতি টিকে আছে। দ্বীপটির ৯০ ভাগ বনভূমিই ধবংস করা হয়েছে, আর এই কারণে লেমুর প্রজাতির সংখ্যা কমতে কমতে এ প্রজাতি মাত্র ২০ এ ঠেকেছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি নিয়ে ‘আইল্যান্ড অফ লেমুরস মাদাগাস্কার’ নামে একটি থ্রিডি আইম্যাক্স তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। ডেভিড ডগলাস পরিচালিত ও ড্রিউ ফেলম্যানের লেখা এই তথ্যচিত্রটিতে বিজ্ঞানী ডক্টর পেট্রিসিয়া রাইটের লেমুরদের রক্ষা করা নিয়ে নানা কর্মকাণ্ড দেখানো হয়েছে।
তথ্যচিত্রটিতে দ্বীপময় দেশটির প্রাকতিক দৃশ্যধারণ ছাড়াও লেমুরদের জীবনযাত্রার কাছাকাছি দৃশ্যধারণ করে দর্শকদের ডক্টর রাইটের পর্যবেক্ষণের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়।
ডক্টর রাইটের সাথে মাদাগাস্কারে তার লেমুরদের নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে কথা বলে টাইম ফর কিডস্ (টিএফকে)।
টিএফকেঃ প্রাইম্যাটালোজিস্ট হিসেবে কাজ করার আগে আপনি একজন সমাজকর্মী ছিলেন। আপনি মানুষদের সাহায্য করা থেকে কিভাবে পশুদের সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত হলেন?
ডক্টর রাইটঃ আমি প্রধাণত একজন পশুপ্রেমী। সমাজকর্মের মধ্য দিয়ে আমি মানুষ সম্পর্কে অনেক জানতে পেরেছি। পরে আমি একটি পেট স্টোরে একটি ছোট বানর দেখে অনেক মজা পাই।
আমি পার্কের চারপাশের মানুষ ও গ্রাম নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি। মাদাগাস্কারে লেমুরদের পাশাপাশি এর মানুষদের নিয়ে কাজ করাটা খুবই ভালো একটা প্রভাব ফেলেছে।
টিএফকেঃ সেদিন আপনি পেট স্টোরে যে বানরটি দেখেছিলেন সেটি কি একটি লেমুর ছিলো?
ডক্টর রাইটঃ সেটি মোটেই লেমুর ছিল না। এটি ছিল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা একটি বানর।
টিএফকেঃ পৃথিবীতে হাজারো প্রজাতির প্রাণি আছে। এসবের মধ্যে কোন বিষয়টি আপনাকে লেমুরের প্রতি আগ্রহী করে তুললো?
ডক্টর রাইটঃ আমি পেট স্টোরে দেখা বানরটির জীবনযাত্রার ধরণ দেখে খুবই মুগ্ধ হয়ে যাই, তাই আমি প্রাইম্যাটালোজিস্ট হিসেবে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করি। প্রথমে আমি আমাজানে পড়ি। কিন্তু যখন আমি মাদাগাস্কারে আসি, আমি লেমুরদের দেখে তাদের অনুসরণ করি। আমি তাদের অনেক ভালোবাসতে শুরু করি। তারা এক কথায় অসাধারণ প্রাণি। আর এই ঘটনাটি ঘটেছিলো সেই ২৮ বছর আগে। সুতরাং আমি মাদাগাস্কারে বেশ কিছু সময় ধরে লেমুরদের নিয়ে গবেষণা করছি।
ডক্টর রাইটঃ আমি গ্রেটার বেমবো লেমুরদের কথা প্রথম আবিষ্কার করি যখন আমি দক্ষিণে একটি মাথার খুলি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এরা ৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একদল লেমুরের অংশ। তখনও বুঝিনি অদৌ তাদের অস্তিত্ব আছে কি না। তাই আমি মাদাগাসকারে এদের অস্তিত্বের খোঁজে আসি। আমি যেদিন প্রথম বারের মতো একটি জীবন্ত গ্রেটার বেম্বো লেমুর দেখি সেই দিনটা আমার জন্যে একটি চমৎকার দিন ছিলো। আমি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম প্রাণিগুলো আসলেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে কি-না, আর যখন আমি তাদের অনুসরণ করে তাদের স্বভাব জানতে পারলাম, আমি আবিষ্কার করলাম তারা অসাধারণ ও স্পাংকি পশু। তারা সারক্ষণ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। খাদ্য হিসেবে বাঁশ তাদের প্রিয়।
ডক্টর রাইটঃ আমি তাদের কোথায় কোথায় খুঁজে পাবো সেটা বুঝতেই কয়েক মাস লেগেছিলো। তারা অনেক লাজুক ও চোখের সামনে তাদের পাওয়া বেশ কঠিন। কারণ এরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লুকিয়ে থাকতে পারে।
তোমার মনে হবে তারা পালিয়ে গেছে, কিন্তু আসলে তারা যেন তোমার চোখের সামনেই অদৃশ্য হয়ে আছে! এটা লুকোচুরি খেলার মতো। যখন তারা বুঝতে পেরেছে আমরা তাদের শত্রু নেই, ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।
টিএফকেঃ আপনি যখন তাদের প্রথমবারের মতো নিজহাতে ধরতে পেরেছিলেন তখন কেমন লেগেছিলো?
ডক্টর রাইটঃ তারা অনেক সুন্দর প্রাণি। তাদের অনেকদিন দূর থেকে দেখে দেখে একদিন নিজ হাতে ধরার অনুভূতিটা অনেক সুন্দর।
টিএফকেঃ মাদাগাস্কার জায়গাটা কেমন?
ডক্টর রাইটঃ এটি পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম দ্বীপ। এটি প্রায় ১০০০ মাইল লম্বা ও ৩৫০ মাইল চওড়া। এখানকার মানুষের পূর্বপুরুষ এসেছে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে। তারা সবাই মালাগাসি এবং দ্বীপটিই তাদের দেশ।
টিএফকেঃ আবার কবে মাদাগাস্কারে যাচ্ছেন? তখন কি নিয়ে গবেষণা করবেন?
ডক্টর রাইটঃ আমি মে মাসের শেষের দিকে ফিরে যাচ্ছি। আমি বর্তমানে নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের স্টোনি ব্রোক ইউনিভারসিটির প্রোফেসর। আমি বেম্বো লেমুর নিয়ে আরো গবেষণা করবো, তার পাশাপাশি লেমুরের আরেকটি প্রজাতি ‘সিফাকাস’ নিয়েও গবেষণা করবো।
আমি স্থানীয় মানুষদের সাথে অনেক জড়িত আর ৫০ টি স্কুলের সংরক্ষণ ক্লাবের হয়ে কাজ করছি।
ডক্টর রাইটঃ অতীতে লেমুররা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। গ্রামের প্রবীণরা বলেন, তখন লেমুরদের শিকার করা নিষিদ্ধ ছিলো, কারণ তারা আমাদের মতোই ছিলো। তাদের অনেক বৈশিষ্ট্যই মানুষের মতো, যেমন তাদের মুখ ও হাত। তাই প্রথমদিকে তাদের শিকার করা হতো না। আমার মনে হয় এখন আগের ঐতিহ্য আর নেই।
আরেকটি সমস্যা কৃষি নিয়ে। মাটি বেশ অনুর্বর, তাই ছাই উৎপাদন করার জন্য মানুষ বনভূমি পুড়িয়ে ফেলছে। ছাইতগুলো ফসলের জন্য সার হিসেবে কাজ করে তাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু মালাগাসি মানুষেরা বুঝতে পারে না যে তারা বনভূমি ধবংস করার মধ্য দিয়ে তাদের ঐতিহ্যও ধবংস করে ফেলছে। তাদের অনেকেই জানে না লেমুর যে খুবই গুরুত্বপুর্ণ ও মাদাগাসকার ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও লেমুরদের খুঁজে পাওয়া ভার।