ওর ছেলেবেলা কেটেছে বান্দরবনের রুমাতে। ২০০৬ সালের পর মা বাবার সাথে ঢাকায় চলে আসে।
বর্তমানে ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্যে কাজ করছে। পড়াশোনা, শিশুদের সাথে কাজের পাশাপাশি একটি ম্যাগাজিনে লেখালেখি করে রিচার্ড।
নিজের ভাবনা আর স্বপ্ন নিয়ে হ্যালোর সঙ্গে কথা হয় ওর।
হ্যালো: কেমন আছ?
রিচার্ড: ভালো আছি। তোমরা কেমন আছ?
হ্যালো: এই তো চলছে, অনেক ভালো। আমরা তোমার সম্প্রদায় নিয়ে কথা বলতে চাই।
রিচার্ড: অবশ্যই। কথা বলার জন্য খুব চমৎকার বিষয়। আমার বন্ধুরাও প্রায় আমার কাছে এ বিষয়ে জানতে চায়।
বমদের সঙ্গে চাকমাদের মিল আছে। তবে এই সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই খ্রিস্টান ধর্ম পালন করে। আমরা চৈত্র সংক্রান্তি, নবান্ন, ক্রিসমাস ডে আর ইস্টার সান ডে ছাড়াও অনেক কিছু উদযাপন করি।
হ্যালো: নিজেদের সংস্কৃতি উদযাপনে তোমরা কতটা স্বাধীন?
রিচার্ড: বান্দরবনে গেলে দেখতে পাবে। এখানে আমরা কতটা ভালো আছি। সেখানে চাকমা, মারমা, খিয়াং আর সব উপজাতি গোষ্ঠীদের মতো আমরা বম জাতিরাও স্বাধীনভাবেই জীবন যাপন করি।
হ্যালো: তোমার পূর্ব পুরুষদের নিয়ে কিছু বল।
রিচার্ড: আমরা মঙ্গোলিয় জাতি থেকে উদ্ভুত। আমাদের পূর্ব পুরুষরা বার্মা, চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে আসা। আমাদের কাঠামোর সাথে বার্মিজ, চায়নিজ, কোরিয়ান, জাপানিজদের মিল রয়েছে।
হ্যালো: তোমাদের নিজস্ব ভাষা আছে না?
রিচার্ড: আছে তো। বম ভাষা। ঘরে, আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আমরা এই ভাষাতে কথা বলি। আমরা স্কুলে বাংলাতেই পড়ালেখা করি। তবে আমাদের মাতৃভাষায় পড়লে হয়তো আরও ভালো লাগত।
হ্যালো: প্রথম প্রথম স্কুলে গিয়ে যখন বাংলা পড়তে হতো বা শুনতে হতো তখন কী কী সমস্যায় পড়েছ? কখনও কি মনে হয়েছে তোমার উপর বাংলাকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
রিচার্ড: আমি যখন স্কুলে যেতাম, তখন বাংলা পারতাম না। আশে পাশের সবাই নতুন একটা ভাষায় কথা বলছে। নিজের প্রয়োজনে ধীরে ধীরে বাংলা শিখে নিয়েছি।
হ্যালো: এখন তো প্রায়ই ভিন্ন ধর্মাম্বলীদের উপর আক্রমণের খবর শোনা যায়। বলা যায়, সহিসংতা বেড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছ কি?
রিচার্ড: আমরা ছোট থেকেই বাঙালিদের সঙ্গে বসবাস করি। আমাদের প্রতিবেশীরা মুসলমান। কিন্তু তারা অনেক মিশুক। মাঝে মাঝে এসব কথা ভাবলে, আমার ভয় হয়। তবুও প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি যেন এমন সহিংসতা না হয়, দেশের সবাই ভালোভাবে বসবাসের সুযোগ পায়।
আমরা কোথাও গেলে কেউ বার বার চাকমা, মারমা বলে ডাকে তখন খারাপ লাগে। অবশ্য, আমরা চাকমা কিংবা মারমা না। তবে, এভাবে সব জায়গায় যদি আমাদের ব্যঙ্গ করা হয়, তখন একটু খারাপ লাগে, মনে মনে ক্ষুব্ধ হই।
আর আমার অনেক বাঙালি বন্ধু আছে। আমি ওদের খুব ভালোবাসি। যখন বাঙালিরা পাহাড়ে ঘুরতে যায় আমার এলাকার মানুষ তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা আর আপ্যায়ন করে। অনেকে গাইডের কাজও করে। মাঝে মাঝে কষ্ট হয় কারণ আমরা এমন সহযোগিতা পাই না।
হ্যালো: এমন কোনো ইচ্ছে আছে যেটা পূরণ হলে ভালো হতো বা পূরণের স্বপ্ন দেখ?
রিচার্ড: সরকার আমাদের জন্যে অনেক কিছু করছে। তবে আমি খুশি হতাম যদি আমাদের সম্প্রদায়ের শিশুরা মাতৃভাষায় পড়ালেখার সুযোগ পেত।
হ্যালো: যে শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন তাদের কথা বল।
রিচার্ড: শিশুদের জন্যে কাজ করতে ভালো লাগে। নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। এই অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করতে ভালোই লাগে।
হ্যালো: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
রিচার্ড: হ্যালোকেও ধন্যবাদ।