পথশিশুর আড্ডায়

স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তায় দেখা মিলল চারজন পথশিশুর সঙ্গে। ওদের সঙ্গে আড্ডা হল ঘণ্টাখানেক।

কথা বলার সময় কখনও হেসে উঠেছি। আবার কখনও ডুকরে কেঁদে উঠতে ইচ্ছে করেছে।

খেলতে খেলতে আমার সঙ্গে কথা বলছিল সিজান। ছবি তুলেছি বলে আনন্দে হেসে উঠল বয়স চার বছর হবে। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় স্কুলে যায় না। পথে পথে ঘুরে কাগজ টোকায়, দিন শেষে বিক্রি করে বাড়ি ফেরে।

আজ অন্যদের সঙ্গে এসেছে কলার আড়তে । পচা, আধ-পচা কলা কুড়িয়ে বাইরে গিয়ে কম দামে বিক্রি করবে। মাঝে মাঝে বাড়ি নিয়ে নিজেও খায় বলে জানায় ও।

সেজান এখনও ঈদের জামা কাপড় কিনতে পারেনি। বাবা কিনে দেবে কিনা সেটাও জানে না।

সঙ্গের বন্ধুরা বলছিল, ও নাকি খুব নাচতে জানে। এ কথা শুনে সেজান মিষ্টি করে হেসে উঠল। দেখে মনে হল লজ্জা পেয়েছে।

ছবি তুলেতেই দাঁত বের করে হেসে দিল রাশেদ। বয়স নয় বছর হবে হয়তো। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে ও। ওই দলটির মধ্যে ও সবার বড়। পড়াশোনার পাশাপাশি ও মাঝে মাঝে নষ্ট কলা সংগ্রহ করতে বের হয়। নিজে খায়, বিক্রি করে।

ঈদের জন্য নাকি একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট কিনেছে। বলল, "খুব সুন্দর। মা বলেছে,  বেশ মানিয়েছে।"

দলটির সবচেয়ে দুষ্ট ছেলের নাম রায়হান। বড্ড দুষ্টুমি জানে! কথা বলেও বেশি। বয়স মনে করতে পারে না। স্কুলে পড়তো, তবে বাবা অসুস্থ হওয়ায় দেশের বাড়িতে গেছিল বলে স্কুলে যায়নি। তখনই নাকি স্কুলের খাতা থেকে নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন বাড়ির পাশের মাদ্রাসায় পড়ে। 

লেখাপড়ার পাশাপাশি ঘুরে ঘুরে পড়ে থাকা জিনিস কুড়ায়, খেলে। এবার ঈদের জন্য একটা নাকি প্যান্ট নিয়েছে, খুব সুন্দর। কয়েকদিনের মধ্যেই ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে।

'গ্রামের বাড়িতে খুব মজা', বলে রায়হান। 

দলের কথা কম বলা শান্ত ছেলেটির নাম নাজিম। পড়াশোনা করে না। বয়স হয়তো পাঁচ বছর হবে। সকাল হলেই কলোনির বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কখনো খেলাধুলা করে সময় কাটায়। কখনো আবার বের হয় সিজানের মতো কাগজ কুড়াতে। সে নাকি নিয়মিত এখানে কলা টোকাতে আসে। মাঝে মাঝে কলা বিক্রেতাদের কাজ করে দেয়। তাতেই নষ্ট কলার পাশাপাশি ভালো ভালো কলাও পায়। তারপর সেগুলো বিক্রি করে। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com