'পাখি দেখতে প্রথম পাহাড়ে' (দ্বিতীয় পর্ব)

'পাখি দেখতে প্রথম পাহাড়ে' (দ্বিতীয় পর্ব)

এভারেস্ট জয়ী বাংলাদেশী, এম এ মুহিত সম্প্রতি হ্যালোর মুখোমুখি হয়েছিলেন। পাহাড়ের রোমাঞ্চকর স্বাদ ভাগাভাগির পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন নিয়ে কথা হয় হ্যালোর সঙ্গে।

হ্যালো: প্রথম যেবার এভারেস্ট জয় করলেন অর্থাৎ ২০১১ সালের কাহিনী। যেদিন নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করলেন ঠিক সেখান থেকে শুরু করুন।

এম এ মুহিত: ২০১১ সালের ৮ এপ্রিল নেপালের কাঠমাণ্ডুর উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওনা হই। সেখানে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিব্বত দিয়ে যাই। একটু বলে রাখি, ২০১০ সালেও আমি এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে গিয়েছিলাম। খারাপ আবহাওয়া ও আমার শেরপার ভুল সিদ্ধান্তে ২৩ হাজার ফুট থেকে ফেরত আসতে হয়েছিল। সেবার আর জয় হয়নি।

১৯ এপ্রিল তিব্বতের উদ্দেশ্যে রওনা হই। পরের দিন চলে যাই তিংরিতে। হিমালয়ের তিব্বতের মালভূমিতে এটি একটি ছোট শহর। ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় এটি। ২০ ও ২১ এপ্রিল এখানেই থাকি। ২২ এপ্রিল চলে যাই একদম বেইজ (base) ক্যাম্পে। চূড়ায় পৌঁছুতে বেইজ ক্যাম্প ছাড়াও আরো পাঁচটি ক্যাম্প আছে। বেইজ ক্যাম্প, মিডল ক্যাম্প, এডভান্স বেইজ ক্যাম্প, ক্যাম্প ওয়ান, ক্যাম্প টু, ক্যাম্প থ্রি তারপর এভারেস্টের চূড়া।

ক্যাম্পগুলো আমরা নিজেরাই করি। একদিনে যতটুকু যাওয়া যায় ততটুকু গিয়ে খোলা জায়গা দেখে তাবু করি।

বেইজ ক্যাম্প হলো ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায়। ২৭ এপ্রিল সেখানেই থাকি। এখানেও কিছু আনুষ্ঠানিকতা ছিল। পরে মিডল ক্যাম্পে যাই। ওটা প্রায় ১৯ হাজার ফুট উঁচুতে। এরপর যাই এডভান্স বেইজ ক্যাম্পে। এটি প্রায় সাড়ে ২১ হাজার ফুট উচ্চতায়। পরে যথাক্রমে ক্যাম্প ওয়ান ( প্রায় ২৩ হাজার দেড়শ ফুট উচ্চতায়), ক্যাম্প টু ( প্রায় ২৫ হাজার ২শ ৬০ ফুট উচ্চতায়), ক্যাম্প থ্রি ( প্রায় ২৭ হাজার ২শ, ৩০ফুট উচ্চতায়) তে যাই।  আর এটাই ছিল শেষ ক্যাম্প। তারপর শুধু এভারেস্টের চূড়া।

চূড়ার উচ্চতা হলো ২৯ হাজার ২৯ ফুট (৮হাজার, ৮শ, ৪৮ মিটার)। শেষ ক্যাম্প থেকে সেখানে যেতে সাধারণত ১০/১২ ঘণ্টার মত লাগে। কিন্তু এখানে তিনটি কঠিন বাধা আছে। যেগুলোকে বলা হয় ফার্স্ট স্টেপ, সেকেন্ড স্টেপ, থার্ড স্টেপ। এখানেই ঘটে যত বিপত্তি। বরফ গেঁথে গেঁথে উঠার জন্য আমাদের পায়ে আইস বুটের মধ্যে ক্রাম্পন (ধাতব কাঠামো) লাগানো থাকে। কিন্তু ঐ তিনটি স্টেপেই কঠিন শক্ত কালো পাথর থাকে। যেখানে ক্রাম্পন গাঁথা যায় না। পাথরে এটা স্লিপ করে। বুঝতেই পারছেন কতটা ভয়ংকর! আধা ঘণ্টা করে সময় লাগে এ বাধাগুলো পার হতে।

হ্যালো: শেরপা কী জানতে ইচ্ছে করছে?

এম এ মুহিত: আমাদের দেশে পাহাড়ে যেমন আদিবাসী জাতি বসবাস করে, তেমনি হিমালয়ের বিভিন্ন উচ্চতায় নানা রকমের জাতি বাস করে। তার মধ্যে শেরপা একটা জাতি। এদের অনেকেই পর্বতারোহীদের সাহায্য করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ওরা বহন করে। আমি দুজন শেরপা নিয়েছিলাম।

হ্যালো: খাবার দাবারের কি ব্যবস্থা করেছিলেন?

এম এ মুহিত: উচ্চতায় অক্সিজেন কম থাকে বলে খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। তেমন কিছুই খাওয়া যায় না। এটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। এডভান্স বেইজ ক্যাম্পে আমাদের বাবুর্চি থাকে। ওখানেই ভাত খাই। এরপর ক্যাম্প ওয়ান, টু, থ্রি সব জায়গাতেই তরল খাবার খেতে হয়।

চা, কফি, স্যুপ, দুধ, হরলিকস, বিভিন্ন রকমের চকলেট ড্রিংকস খেয়েছি। বরফকে পানি করে ফুটিয়ে চা-কফি, হরলিকস বানিয়েছি। খেজুরও নিয়েছিলাম। যেটা আমি সবসময়ই নেই।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com