আমি: তোমার নাম কি?
সাগর: সাগর ইসলাম।
আমি: তুমি কতোদিন ধরে তুমি ফুল বিক্রি করছ?
সাগর: গত বছর থেকে।
আমি: তোমার বাড়িতে আর কে কে আছেন?
সাগর: বাবা, মা আর ছোট ভাই।
আমি: তোমার বাবা কী করেন?
সাগর: রিকশা চালায়।
আমি: আর মা?
সাগর: বাসায় থাকে।
আমি: তোমার মা কোথাও কাজ করেন না?
সাগর: না, আগে করত। ছোট ভাই হইছে তাই আর করে না।
আমি: কোথায় থাকো তুমি?
সাগর: কারবালায় (একটা জায়গার নাম)।
আমি: ওটা কি তোমাদের নিজেদের বাসা?
সাগর: না, ভাড়া থাকি।
আমি: তোমাদের নিজেদের বাড়ি কোথায়?
সাগর: মনিরামপুর।
আমি: এখানে কতদিন থাক?
সাগর: দুই তিন বছর।
আমি: মাসে তোমাদের বাড়ি ভাড়া কতো বলতে পারো?
সাগর: সাতশ টাকা।
আমি: তুমি কি প্রতিদিন এখানেই ফুল বিক্রি কর?
সাগর: না, বিকালে এখানে থাকি। অন্য সময় পৌর পার্ক, স্কুলের সামনে যাই।
আমি: প্রতিদিন কত টাকা আয় হয়?
সাগর: দুই থেকে তিনশ টাকা।
আমি: আজ কত টাকা পেয়েছ?
সাগর: ১০০ টাকা বেচছি।
আমি: কতো টাকা দিয়ে কিনেছিলে?
সাগর: ৪০ টাকা।
আমি: কে কিনে দেয় ফুল তোমাকে?
সাগর: আমি নিজেই কিনি।
আমি: তোমার পড়াশোনা করতে ইচ্ছা করে না?
সাগর: করে। মাঝে মাঝে আব্বা কারবালার হুজুরের কাছে পড়তে পাঠায়।
আমি: তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?
এ প্রশ্ন করার পর সাগর চুপ হয়ে গেল। ও কোনো কথা না বলে শুধু তাকিয়ে থাকল। ও উঠে গেল। আমিও আর ওকে আটকালাম না। টাকা আয়ের ব্যস্ততার চেয়ে বড় ব্যস্ততা হয়তো নেই। ওর তো ব্যস্ত। ওর মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনো অধিকার আমার নেই।
সাগরকে দেখে আমার দেশের জন্য খুব কষ্ট হলো। এই শিশুদের সঠিক বেড়ে উঠা, শিক্ষা নিশ্চিত করলে বাংলাদেশ মানব সম্পদে ভরপুর হয়ে যেত। আমরা কী হারাচ্ছি নিজেরাই জানি না। না জানি কত মেধা অকালে নষ্ট হচ্ছে তার খবর কেউ কি রাখি?