তিলোত্তমা ঢাকা

অন্নদাশংকর রায় 'পারী' নামের ভ্রমণকাহিনীতে প্যারিস সম্পর্কে বলেছিলেন, অর্ধেক নগরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা। রাতের ঢাকা ঘুরে আমারও তেমনই একটা ভাবনা চলে এল এই তিলোত্তমা নগরী নিয়ে। পারীর মতো না হলেও আমার ঢাকা সুন্দর।

ব্যস্ততম নগরী রাজধানী ঢাকা। সময় ভেদে যার চিত্রও ভিন্ন। সকালে এক তো বিকেলে আরেক। আবার রাতের চিত্র অন্য।

বেশ কয়েকদিন আগের ঘটনা। রাত সাড়ে বারোটা। ভাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। পুরান ঢাকা, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিলসহ আশেপাশের বেশ কটি এলাকা ঘুরে বেড়ালাম দুজন মিলে।

শীতের আমেজে রিকশায় চড়ে রাতের ঢাকাকে বেশ সুন্দরী মনে হচ্ছিল। ভেবেছিলাম রাতে হয়ত যানজট থাকবে না, কিন্তু ধারণা ভেস্তে গেলো আমার। রাস্তায় প্রচুর যানজট। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, সিএনজি হাতে গোনা। মালবাহী ট্রাকেই সৃষ্টি হয়েছে এই জট।

রিকশায় যেতে যেতে চালক মামার সঙ্গে গল্প হল অনেক, কথা হল রাতের পাহারাদার, পুলিশ, রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা অসহায় মানুষদের সঙ্গে।

রাতে যারা রিকশা চালায় তারা নাকি সারা রাত ঘুমান না। সন্ধ্যার দিকে গেরেজ থেকে রিকশা এনে সারা রাত চালায়।

একজন বললেন, দিনের বেলায় চাকরি করি। রাতে রিকশা চালায়। ছেলের ক্যান্সার তাই অনেক টাকা লাগে।

তিনি বললেন, অনেকে আছে যারা দিনে লেখাপড়া করে রাতে রিকশা চালায়। সবই নিয়তির খেলা বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি।

বুঝতে বাকি রইল না, নিশাচর এই রিকশাচালকদের জীবন নিশির চেয়েও আধাঁরময়। মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার।

রাত ১০টার পরেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টগুলোতে টহল দেন পুলিশররা। সেদিনও চোখে পড়ল তাদের সরব অবস্থান।

আমাদের রিকশা আটকে জিজ্ঞেস করল ভাইয়ারা কোথায় যাবেন?

বললাম 'রাতের ঢাকা দেখছি'।

উনি বললেন সাংবাদিক নাকি? বললাম, হুমম। বিডিনিউজের।

সার্জেন্ট আঙ্কেল তো একেবারে 'থ' বনে গেলেন। মাথায় চোখ তুলে বললেন, পিচ্চি ছেলে বলে কী?

তারপর তিনি আমাদের দুজনকে চায়ের নিমন্ত্রণ করলেন। উনার অনুরোধে তাদের চৌকিতে বসে চা পান করলাম।

কথায় কথায় জানতে পারি উনারা শিফট পরিবর্তন করে কর্তব্য পালন করেন। তবে রাতে নাকি চোখ কান বেশ সজাগ রাখতে হয়। মিনিট বিশেক কথা বলি নিরাপত্তার নানা দিক নিয়ে।

হাতিরঝিলে ঢুকতে চেয়েও পারিনি। রিকশাওয়ালা নিজেই বর্ণনা করছিলেন ওখানকার নাজুক নিরাপত্তার কথা। পথে পথে দেখলাম রাস্তার দুপাশের দোকানগুলো বেশিরভাগই বন্ধ।

মাছের আড়ৎ, কাঁচা বাজার, সজাগ এটিএম বুথ, টহল পুলিশের সাইরেন আর কুকুরের শোরগোল সব মিলিয়ে ভালো লাগলো সোডিয়াম বাতির হলদে ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com