দাও ফিরে সে অরণ্য

ঢাকা মহানগরীর সবুজবাগের বড় অংশে জলরাশিতে পূর্ণ বিস্তীর্ণ ঝিল ছিল। এর আশেপাশে গাছপালা, ঝোপঝাড় ছিল পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। নির্মল পানিতে ছিল নানা ধরণের মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণি। বর্ষায় এই ঝিলের পানি প্রবাহিত হতো বালু নদীতে।

এই ঝিলের আশপাশেই ছিল জনবসতি। মানুষ আর প্রাকৃতিক পরিবেশ মিলে ছিল এক অপূর্ব সমাবেশ। নগরীতে এমন গ্রামীণ পরিবেশ বড় চোখে পড়ত না।

কিন্তু সেসব আর নেই এখন। হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়। হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সভ্যতার কড়াল গ্রাসে ঝিল ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে জনবসতি। অনেকে  ঝিলের উপর পিলার তুলে বাড়িঘর নির্মাণ করছেন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। একসময় এই ঝিল দিয়ে চলাচল করত অনেক নৌকা। এখন তা ইতিহাস হয়েছে। ঝিলে ছিল প্রচুর মাছ। কয়েকছর আগেও এখান থেকে মাছ তুলে লোকেরা হাটে বিক্রি করত।

ঝিলের আশপাশ এলাকায় অনেক গাছপালা ছিল। নানা রকম পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকত এলাকা। সাপ, বেজি, নানা ধরনের পাখি বিচরণ করত অবাধে। এ যেন ছিল নগরের বুকে এক ছোট গ্রাম।

আজ বসতি নির্মাণের প্রতিযোগিতায় সেসব হয়েছ অতীত। গাছ কাটা হয়েছে নির্মমভাবে। জলাশয় ভরাট হয়ে উঠছে বহুতল ভবন। তাই জলজ প্রাণির মতো স্থলের অনেক প্রাণিও হারিয়ে যাচ্ছে।

বাসস্থান ও খাবারের জন্য এসব প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা এখনও চোখে পড়ে। কিন্ত আর বেশিদিন দেখা যাবে বলে মনে হয় না।

একদিকে জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, অপরদিকে যা অবশিষ্ট আছে তাতে প্রতিনিয়ত পড়ছে ঘর বাড়ির বর্জ্য। একসময়ের নির্মল পানি আর নেই, হয়ে গেছে দুর্গন্ধময় পচা জল। ঘরবাড়ির বর্জ্যে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে যেন পুরো ঝিল। পানির রং হয়েছে আলকাতরার মতো কুচকুচে কালো।

শান্ত টলটলে ঝিলটার অতীত মনে হলে বুকের ভেতরটা মোচড়ে উঠে। রবি ঠাকুরের মতো বলতে ইচ্ছে করে, দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com