ক্ষমা করবেন স্যার

তখন খুলনা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। স্কুলটায় প্রথম যেদিন গেলাম ক্যাম্পাস দেখেই প্রেমে পড়ে যাই। একেবারে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইটের মতো।

যথারীতি ভর্তি পরীক্ষা দেই। মনে দৃঢ় সংকল্প ছিল এই স্কুলে আমি পড়বই। বেশ ভালো ফলাফল করি ভর্তি পরীক্ষায়। ভর্তি হয়ে যাই স্কুলে।

প্রথম কয়েকটা ক্লাস আমি করতে পারিনি। সাতদিন পরে ক্লাসে গিয়ে জানতে পারলাম আমি ক্লাস ক্যাপটেন নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের স্কুলের নিয়ম রোল এক ও দুই ক্যাপ্টেন হয়।

চলতে থাকল সবকিছু ঠিকঠাক মতোই। ক্যাপটেন হওয়ায় শিক্ষকরাও আমাকে বেশ ভালোভাবে চিনতেন।

আনুমানিক ছয়-সাত মাস পরে আমাদের ইংরেজি শিক্ষক বদলি হয়ে যান। তার জায়গায় নতুন একজন শিক্ষক আসেন। কেনো জানি না, প্রথম থেকেই তিনি আমার উপর চটা ছিলেন। আমি পড়া পারলে কোনোমতে বেঁচে যেতাম। কিন্তু কোনো কারণে পড়া না পারলে আমার বন্ধুরা পর্যন্ত আঁৎকে উঠত আমার পরিণতির কথা ভেবে।

তার সব আক্রোশ যেন আমার ওপরেই ছিল। আমার অন্তত তাই মনে হতো। পড়া না পারলে তিনি আইডি কার্ড ধরে কাছে টেনে নিয়ে চড় লাগিয়ে দিতেন।

শুধুমাত্র ঐ শিক্ষকের কারণেই আমি আমার স্বপ্নের স্কুলে এক বছরের বেশি পড়তে পারিনি।

তবুও সেই শিক্ষকের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা জাগেনি মনে। পরিবার থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও আমি আটকে দেই।

তখন আমি মনে করতাম স্যার হয়তো আমার ভালোর জন্যই এটা করেছেন।

আমার এতগুলো কথা বলার উদ্দেশ্য একটাই। মা বাবার পরই শিক্ষককের স্থান। কোন সন্তান তার বাবা মায়ের উপর প্রতিশোধ নিতে পারে না, লাঞ্ছিত করতে পারে না, অপদস্ত করতে পারে না, গায়ে হাত তুলতে পারে না। যদি কেউ এমন করে তাহলে সে আর ছত্র বলতে পারে না নিজেকে।

কয়েকদিন আগে ছাত্র নামধারী কিছু পশু শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর নির্যাতন করেছে।

এতে জাফর ইকবাল দুঃখ পেয়ে বলেছেন,"এখানে যে ছাত্ররা শিক্ষকদের উপর হামলা চালিয়েছে, তারা আমার ছাত্র হয়ে থাকলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া উচিৎ।"

একজন শিক্ষক কতটা কষ্ট পেলে গলায় দড়ি দিতে চান তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পত্রিকা পড়ে জানলাম শাবিপ্রবির ভিসির নির্দেশে এই ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কেউ একজন আমাকে নির্দেশ দিলেই আমি আমার শিক্ষককে পেটাবো, এটা কেমন কথা?

ওরা আসলে মানুষই নয়। ওরা ছাত্র নামের কলঙ্ক। সেই ঘটনার পর থেকে নিজেকে ছাত্র পরিচয় দিতে লজ্জা লাগছে।

ক্ষমা করবেন স্যার। আমরা ছাত্রই থেকে গেলাম, আপনাদের সন্তান হতে পারলাম না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com