আমি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। মডেল টেস্ট পরীক্ষার দিন ঘটনাটি ঘটেছিল। তখনও খাতা-কলমে সেই স্কুলের ছাত্র ছিলাম বলেই লেখাটা ছাপাতে চাইনি। তাহলে হয়ত সে বছর আমার আর পরীক্ষা দেওয়া হতো না।
স্কুল হলরুমে একসাথে দুশ ছাত্র পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। প্রশ্ন হাতে পেয়ে সবে লিখতে শুরু করেছি।
তারপরই ঘটল বিপত্তি। প্রধান শিক্ষক এলেন পরিদর্শনে। হলে ঢুকেই উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন, “সাংবাদিক কোথায় বসেছে? সাংবাদিক দাঁড়াও।”
আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা বুঝে নিয়ে উত্তর লেখা বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম।
তিনি বলতে লাগলেন,“কিসের সাংবাদিকতা করিস? মাথা ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে সাংবাদিকতা মাথা থেকে বের করে দে।”
হল ভর্তি ছাত্রদের সামনেই আরও অনেক খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন যা লেখার মতো নয়। তারপর চলে গেলেন।
আমিও লিখতে শুরু করলাম। কিন্তু হাত আর চলে না। লজ্জায় দুঃখে কিছুই লিখতে পারছি না।
প্রশ্নের উত্তর ভুলে প্রধান শিক্ষকের কটূক্তিগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।
পরীক্ষার হলে বসেই ভাবলাম, বাসায় গিয়ে আত্মহত্যা করব। চিঠিতে লিখে যাবো, আমার কী স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার নাই? আমার কি নিজস্ব কোন চিন্তা, ইচ্ছা থাকতে পারে না?
পরক্ষণে ভাবলাম, না আত্মহত্যা করাটা বোকামির কাজ হবে। সাংবাদিকতা দিয়েই এর জবাব দিব। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়ব। পরীক্ষার হল ছাড়া বাইরে কোথাও থাকলে হয়তো ভাববার অবকাশ পেতাম না। হয়তো হঠকারী এই ভাবনা থেকেই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতাম।
মাথা ঠাণ্ডা করে পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম। এসএসসি পরীক্ষার ফল হয়েছে খারাপ। জিপিএ-পাঁচ পাইনি। চার দশমিক ৭২ পেয়ে পাশ করেছি।
এতেও আমার বাবা মা অসন্তুষ্ট হননি। তারাও আমার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই আমাকে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ানোর কথা ভাবছেন।
আমি সাংবাদিকতা পড়ব বলেই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয়েছি। লক্ষ্যে আমি পৌঁছাবই।