মধ্যবিত্তের ভালোবাসা

মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আমার। অনেক চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ থেকে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এজন্য মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয় কেন বড় লোকের ঘরে জন্মাইনি।

যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকে আমার পরিবারের অর্থনৈতিক  অবস্থা যেমন ছিল এখনও তা একটুও পাল্টায়নি। মনে হয় ঠিক তেমনই আছে।

সবসময়ই যেন কোন রকমে চলে যায় অবস্থা। অন্যের বিলাসিতা দেখলে মনে হয়, একবার অন্তত যা খুশি পাবার সুযোগ যদি পেতাম!

কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। যা কিছু চাই তার একটি পূরণ হলেও বাকিগুলো ভাবতে ভাবতে হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যায় কর্পূরের মতই।

মাঝে মাঝে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাই। সেখানে আমার যা খুশি করি, যা চাই তাই পাই। সেটা এক দারুণ অনুভূতি।

বিলাসিতা নয়, যখন সত্যি সত্যি কোন জিনিসের দরকার হয় তখন সেটা চাইতেও যেন হাজারটা চিন্তা মাথায় আসে। আব্বু কি দিতে পারবেন? এটা ছাড়াও কী আমার চলতে পারা উচিত? এসব সাতপাঁচ ভেবে আব্বুকে আর বলা হয় না।  

বন্ধুদের কাছে ভালো মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ দেখলে ইচ্ছে হয় আব্বুকে বলি কিনে দিতে। কিন্তু আব্বু দিতে পারবেন না বা চাইলে হয়ত দিতে  না পেরে কষ্ট পাবেন তাই বলি না।

তখন রাগ হয় নিজের ওপর। মাঝে মাঝে আব্বুর ওপরও। তারপর নিজেকে বোঝাই এভাবে আব্বুকে কষ্ট দেওয়া উচিত না। তিনি চেষ্টা করেন কিন্তু পারেন না। এটা তার দোষ না। অথচ আমি না বুঝেই কিছু চেয়ে মাঝে মাঝে কষ্ট দিই।

এতো কিছুর মধ্যেও কিছু ব্যাপার আছে যেগুলা আমার জীবনে অক্সিজেন হিসেবে কাজে করে। জীবনটাকে রঙিন করে তোলে। আব্বু-আম্মুর ভালোবাসা, ছোট বোনের সঙ্গে দুষ্টুমি আমার না পাওয়ার সব দুঃখকে ভুলিয়ে দেয়।  

আব্বু প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় কিছু না কিছু নিয়ে আসেন। প্রতিদিন আব্বুর ফেরার অপেক্ষা করি। তিনি ফিরলে সবাই একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করি।

মাঝে মাঝে বোনটার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন কিছু লুকিয়ে খেতে গিয়ে ধরা পড়ে সেটা নিয়ে কি দারুণ হুটোপুটি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

আম্মু আমাকে আর আমার বোনকে প্রায়ই মুখে তুলে খাইয়ে দেন। অসাধারণ সব অনুভূতি এগুলো। কোন দামি মোবাইল বা ল্যাপটপ পাওয়ার কাছে এগুলো কিছুই না।

কখনও রাগ হয়ে না খেয়ে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকি। আব্বু বারবার ডাকতে আসেন। যতক্ষণ না বের হব ততক্ষণ তিনি দরজায় দাঁড়িয়েই থাকেন। তখন নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। আনন্দে চোখে জল এসে যায়।

মধ্যবিত্ত পরিবার বলে যে কেবল মাত্র আমার চাওয়া-পাওয়া ঠিকমত পূরণ হয় না ব্যাপারটা এমন না। আব্বু-আম্মুরও কোন শখ পূরণ হয় না। ঈদ আসলে আমরা নতুন কাপড় ঠিক পাই কিন্তু আব্বুকে কখনও একটা পাঞ্জাবি কিনতে দেখিনা। পুরনো পাঞ্জাবি পরেই ঈদের নামাজ পড়তে যান।

তবুও মনে হয় মধ্যবিত্ত হয়েই হয়ত ভালো আছি। এখানে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব না মিললেও ভালোবাসা ঠিকই পাওয়া যায়। আর এই ভালোবাসাটাই আমার কাছে সবচাইতে বড়। এই ভালোবাসাটাই আমার জীবনের চালিকা শক্তি। আর এ ভাবনাগুলোই আমার শক্তি।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com