সাংবাদিক বেবী মওদুদের নাম শুনেছি অনেক তবে সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি লেখক, নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সংসদ সদস্য ছিলেন। শিশু সাংবাদিকতার সাইট হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রথম সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
কলকাতায় ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন জন্ম নেন তিনি। বাবা আবদুল মওদুদ ছিলেন বিচারপতি। তার মায়ের নাম ছিল হেদায়েতুন নেসা। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বেবী মওদুদ ছিলেন তৃতীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ষাটের দশকের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে বেবী মওদুদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য এবং ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় বেগম সুফিয়া কামালের সঙ্গে কাজ করেন। বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের আগে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৭-৬৮ মেয়াদে তিনি ছিলেন রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সাহিত্য সম্পাদক।
১৯৯১ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন বেবী মওদুদ। সে সময় তাকে পুলিশের লাঠিপেটারও শিকার হতে হয়েছিল।
বেবী মওদুদ ১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে দৈনিক সংবাদ, বিবিসি, দৈনিক ইত্তেফাক, বাসস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় দীর্ঘদিন কাজ করার পর ২০০৯ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে যোগ দেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি আমাদের শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তার শিশুতোষ বইয়ের মধ্যে রয়েছে দীপ্তর জন্য ভালবাসা, টুনুর হারিয়ে যাওয়া, শান্তর আনন্দ, এক যে ছিল আনু, মুক্তিযোদ্ধা মাণিক, আবু আর বাবু এবং কিশোর সাহিত্য সমগ্র।
এছাড়াও শেখ মুজিবের ছেলেবেলা, মনে মনে (ছোট গল্প), দুঃখ-কষ্ট-ভালবাসা (উপন্যাস), সষি পুষি টুষি (ছড়া) ও পাকিস্তানে বাংলাদেশের নারী পাচার (রিপোর্টাজ) তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা।
আমাদের দেশের একজন সাহসী কলম সৈনিক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ সম্পাদনাতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
বেবী মওদুদ ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতেন, ভালোবাসতেন বই পড়তে, শখ ছিল গান শোনা আর নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর ছিলেন।