অবহেলিত শিশুর গায়ে ঈদের হাসি

ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ মনে হল এবারের ঈদটা একটু অন্যরকমভাবে পালন করলে কেমন হয়?

যেইভাবা সেই কাজ। বন্ধুদের জরুরি তলব করে মিটিং করা হল। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেরা চাঁদা তুলে সেই টাকায় দরিদ্র পথশিশুদের ঈদের কাপড় ও খাবারের ব্যবস্থা করব।

লেগে গেলাম সেইদিন থেকেই। ঈদে নতুন কাপড় বিতরণ নতুন কিছু নয়, কিন্তু আমাদের কাজের বিশেষত্ব ছিল। আমরা চেয়েছিলাম এটা করব ঈদের দিনই। কারণ আরো অনেক সংগঠনই কাজ করবে। তারা অনেককেই কাপড় দেবে। আমরা ঠিক করলাম যে শিশুগুলো এর বাইরে থেকে যাবে আমরা শুধু তাদেরকেই কাপড় দেবো।

আমরা চাঁদ রাত পর্যন্ত টাকা তুললাম। এছাড়া কেনাকাটা, প্যাকেটিংসহ অনেক কাজ করতে হল  সে রাতে। দম ফেলার ফুসরত ছিল না কারোরই। তবে ক্লান্ত হয়নি মোটেও। বরং নতুন কিছু করার উত্তেজনায়  কারো ঘুমই আসছিল না।

যা হোক, ঈদের দিন সকাল সকাল জামা-কাপড় আর খাবার ভর্তি ব্যাগ নিয়ে সারাদিনের জন্য বেরিয়ে পড়লাম আমরা। প্রথমেই যে মেয়েটাকে দেখলাম তার বয়স আট বা নয়। মসজিদের সামনে পঙ্গু বাবাকে নিয়ে ভিক্ষা করছিল। হঠাৎ এতগুলো ছেলেমেয়েকে চারপাশে দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল ও। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা যখন নীল একটা জামা ওর হাতে দিয়ে ঈদ মোবারক বলে চেঁচিয়ে উঠলাম তখন খুশিতে ওর মুখটা ঝলমল করে উঠল।

ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ওর চোখ ঠেলে জল বের হতে চাইল। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারছিল না।

আমরা কি কম যাই নাকি? অসহায় শিশুদের একটুও কাঁদতে দেবো না বলেই সেদিন রাস্তায় নেমেছিলাম। তাই ওকে কাঁদার সুযোগ না দিয়েই জানতে চাইলাম খুশি হয়েছে কিনা? আলতো করে মাথা নাড়িয়ে বোঝাল সে খুশি!

আরেকবার জড়িয়ে ধরে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েই আমাদের উল্টোযাত্রা। ছোট্ট মেয়েটা হয়তো কোনোদিনও জানবে না তার এই মায়াভরা  অবাক আনন্দ দশ-বারোজন উদ্ভট পাগলাটে ছেলেমেয়ের স্মৃতিতে এক অসাধারণ, অমূল্য সঞ্চয় হয়ে থাকবে।

সারাদিনে এমন আরো অনেকগুলো অবাক মুখের দেখা পেয়েছিলাম আমরা। ওদের খুশির রেশ মুছিয়ে দিয়েছে শুরুর দিকের সব পরিহাস আর ঠাট্টাকে।

আমাদের পরিকল্পনা শুনে অনেকেই বলেছিল, করতে চাও তো ঈদের আগে কর। ঈদের দিনই কেন? পাগল হয়েছ?

হয়তো সমালোচকদের কথাই ঠিক। আমরা পাগল। নইলে ঈদের সকালে কেউ না খেয়ে সারাদিন এভাবে ঘুরেঘুরে দুঃস্থদের কাপড় বিলিয়ে বেড়ায়।

কিন্তু সেই পাগলগুলোর ঈদের আনন্দই ছিল সবচেয়ে খাঁটি, নিষ্পাপ আর অকৃত্রিম। বিকেল পর্যন্ত রাস্তাঘাটে ঘুরেঘুরে  হতদরিদ্র শিশুদের ঈদের নতুন জামা আর সেমাই, চিনি, দুধ, বাদাম, কিসমিসের প্যাকেট দিয়েছি আমরা।

আমি, ইফতি, ইমরান, ইভান, অঝর, অহনা, অয়ন, আবিদ, আশফাক, আরিফ ভাই, তন্ময়, নাহিন, সাকিব, সালসাবিল, সিফাত, রাফাত, শুভ ভাই এবং অনেকের চেষ্টায় আমরা সফল হই।

না খেয়ে বেরিয়ে এতবেলা পর্যন্ত বাইরে থাকায় বাসায় বকা খেতে হয়েছে প্রায় সবাইকেই। কিন্তু সেটা যে এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির কাছে কিছুই নয় তা অন্যরা কেউ বুঝবে না।

সবার প্রশংসা আর সমর্থন সব মিলিয়ে আমরা আগামীতে আরও বড় ইভেন্টের আয়োজন করব।

ঈদ মোবারক!

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com