সুন্দরবনের পিকনিকে 

পিকনিক করতে গিয়েছিলাম সুন্দরবনে, যেখানে বাস করে বিশ্বসেরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

স্কুল থেকে এই পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল। অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে যাবার। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে এই উত্তেজনায় সারারাত ঘুম এলো না।

বাবা বাসে উঠার সময় বড় এক বোতল পানি দিয়ে দিলেন। আমি বিরক্ত হলেও পরে ওকানে গিয়ে এর দাম টের পেলাম।

 সুন্দরববনের পানি লোনা। খাবার পানির সঙ্কটে সেই বোতলের পানিই ছিল সাত রাজার ধন।

বাসে উঠার পর থেকে আমরা বন্ধুরা খুব আনন্দ করতে থাকি। নাচতে নাচতে রওনা হয়ে গেলাম সুন্দর বনের পথে।

দুপুর বেলা মংলা পৌঁছনোর পর বোট ভাড়া করে এবার জল বিহার শুরু হলো।

রঙ বেরঙের সুন্দর পাখি আর প্রজাপতির ওড়াউড়ি, বিচিত্র সব গাছপালা যেগুলো বইয়ে পড়েছি, সুন্দরী, গোলপাতা, গেওয়া চিনতে চিনতে পাড়ি দিচ্ছিলাম পথ।

নদীর তীরে গোলপাতায় ছাওয়া ঘরগুলো দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, সেখানে দরিদ্র মানুষের বসবাস। 

মন খারাপ হলো যখন শুনলাম, বনের ভেতরে যাবার অনুমতি মিলবে না। শুনলাম বন দস্যুদের উপদ্রব বেড়েছে তাই যাওয়া বারণ।

মনে হচ্ছিল, ভেতরে যেতে পারলে হয়তো বাঘ মামার দেখা পেতাম।

সুন্দরবনে পার্কের মতো তৈরি সংরক্ষিত এলাকায় গেলাম।

সেখানে মিনি চিড়িয়াখানায় অনেকগুলো কুমির ও কুমির ছানা দেখেছিলাম।

হরিণ এবং হরিণ ছানা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। একটি হরিণ ছানা আমার কাছে এলে আমি তাকে আদর করে দিয়েছিলাম। আমি বানরও দেখেছিলাম ওখানে।

পার্কে দর্শনাথীদের সুবিধার জন্য বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কাঠের পুল তৈরি করা হয়েছে।

বনবিবির ছবি দেখলাম। বনবিবি হচ্ছে বনের দেবী। বাওয়ালি আর মৌয়ালরা সুন্দর বনের গভীরে যাওয়ার সময় এ দেবীর পূজা করে আর মুসলমানেরা গাজীকালুকে স্মরণ করে। মৌয়ালরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর বনে গিয়ে মধু সংগ্রহ করেন আর বাওয়ালিরা কাঠ।

খাওয়া দাওয়া সেরে ফেরার সময় মন খারাপ হয়ে গেল। সুন্দর বন ছেড়ে আমার ফিরতে ইচ্ছে করছিল না।

ফেরার সময় বড় একটা মালবাহী জাহাজ দেখেছিলাম। ওগুলোকে কার্গো জাহাজ বলে।

আমি অপরূপ এই সুন্দর বনে যাবার কথা কোনদিন ভুলতে পারব না।  

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com