'অধিকার আদায়ে লড়ব'

একটি শিশুর সবচেয়ে আপনজন হচ্ছে তার বাবা-মা। আজীবন ভালোবাসা আর ভরসার একমাত্র নিশ্চিত জায়গা। আর তা জেনেই শিশুটি হেসে খেলে বেড়ায় পরম নিশ্চিন্তে।

কিন্তু আমার বেলায় ঠিক তার উল্টোটা হয়েছে। জীবনের মানে যখন বোঝা শুরু করেছি তখন থেকেই মা ও নানা আমার কাছে অনেক বড়। বাবা বলে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি আমার কাছে তখন শুধুই একজন অসৎ মানুষ যে আমার আম্মুকে কষ্ট দেয়।

ছোটবেলা থেকেই বাবার ব্যবহার আমাকে খুব কষ্ট দিত। আর ধীরে ধীরে তার ব্যবহার আরও খারাপ হতে থাকে। নানান খারাপ কাজ করে নিজে ভালো সাজার জন্য সবার সামনে অকপটে মিথ্যে বলে যেতো। কি চমৎকার অভিনেতা! কেউ ধরতেও পারতেন না।

এক সময়  তার ব্যবহার সহ্যসীমা অতিক্রম করে আমাদের। অতি তুচ্ছ কারণে আম্মুকে মারধর করত সে। ইচ্ছে করেই নানা রকম ঝামেলা করতো। ছোটবেলা থেকে এগুলো দেখতে দেখতে আব্বুর প্রতি আমার ঘৃণা জন্মাতে থাকে।

আমার এসব আচরণ অসহ্য লাগতো। প্রতিদিন আর এসব সহ্য করতে পারছিলাম না। শুধু ভাবতাম ইস যদি আমি আর আম্মু একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।

কেন আব্বু এমন করে? কী লাভ হয় তার এসব করে, কিছুই বুঝতে পারতাম না। আব্বুর সাথে আমার চাচারাও আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করত আর আব্বুকে উৎসাহিত করতো।

আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য তারা অত্যাচার করতে থাকে। বাড়ি থেকে বের হয়ে না গেলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।

আমার বাবা পেশায় একজন চিকিৎসক। সে চাইলেই আমাদের ভরণপোষণের টাকা দিতে পারতো। কিন্তু তা ঠিকভাবে আমাদের দিত না। তাই আম্মুর আমাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়।  
আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য আছে তার কিন্তু তাও সে ঠিকভাবে দিতো না। এভাবে কষ্ট দিয়ে দিয়ে একসময় সে আম্মুকে ডিভোর্স করে দেয়।

এরপর সে আমাদের কোনো খোঁজ রাখেনি এমনকি আমরা কীভাবে চলি তা ভাবেননি। পরে আমরা আইনের ব্যবস্থা নিলে আমাদের খুব অল্প কিছু টাকা দেওয়ার সম্মতি জানায়। যা দিয়ে আমাদের তেমন কোন সাহায্য হয় না। এরপর আমরা অনেক মানবাধিকার সংস্থাতে গিয়েছি। কিন্তু কোথাও থেকে তেমন সাহায্য পাইনি।

এ কেমন বাবা? যার একটুও মায়া নেই। এমন বাবা যেন কারও না হয় আমি এটাই চাই।

এখন বাবা আমাদের খুব অল্প কিছু টাকা দেয়। তা দিয়ে আমাদের একদম চলে না। বাকিটা আমার নানা চালান। আমার নানার জন্য আমার কষ্ট হয়। তিনি আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন। এই বয়সে তিনি আমাদের সংসারটাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরম মমতায়। এই বয়সেও এতো কষ্ট করেন তিনি কিন্তু চেহারায় তার বিরক্তির ছাপ দেখি না।

আব্বু যে সামান্য টাকা দেয় মাঝে মাঝে হুমকি দেয়, সেটাও বন্ধ করে দেবে। কিন্তু আমি তা কখনও হতে দেবো না। প্রতিবাদ করব আমাদের প্রতি হওয়া সব অন্যায়ের। জানি না আইন আমাকে সেভাবে সাহায্য করবে কী না। তবুও আমি অধিকার আদায়ে লড়ে যাব।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com