পেটে ইঁদুরদৌড়ের কথা চেপে গিয়ে বেশ একটা করুণ মুখ করে দাঁড়ালাম আম্মুর সামনে। রান্নার জন্য সব ঠিকঠাক করে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছেন আম্মু। গ্যাস যে থাকবে না তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।
চাইলেই বাইরে থেকে খাবার কিনে আনা যেত, কিন্তু আমরা আবার খুব সচেতন পরিবার। ঘরোয়া আর স্বাস্থ্যকর রান্না ছাড়া আমরা খেতে পারিনা। তাই গ্যাসহীন পুরো শহরে একমাত্র আমাদের ঘরেই রান্না হল!
কীভাবে?? সে এক মস্ত বড় কাণ্ড।
আমাদের ঘরে দইয়ের একটা হাঁড়ি ছিল, দা দিয়ে সামনের অংশে ফুটো করে সেটাকে চুলা বানানো হল। বাঁশের একটা পুরনো ঝুড়ি ভেঙে লাকড়ি বানান হল, পুরোনো পত্রিকা, কাগজ একসাথে করা হল। এরপর চুলায় আগুন দেওয়া হল। আমার খুব আনন্দ লাগছিল।
আগুন জ্বলছে
ধোঁয়া উড়ছে,
রান্না হচ্ছে!
ঘরময় কালো ধোঁয়া, সাথে হাঁচি আর কাশি ছড়িয়ে দিয়ে ঘন্টা কয়েকের মধ্যেই রান্না হয়ে গেল। গরম ভাত সাথে ঢেঁড়স ভাজি, ছোট মাছের চচ্চড়ি, টমেটো আর থানকুনি পাতার সালাদ। রেডি। আহা! তোফা!! সত্যি বলছি, ঐ বেলার খাবারের স্বাদ ছিল জম্পেশ।
ডিজিটাল এই যুগে ইট-পাথরের দালানের বারান্দায় বসে সাদা-কাল সিনেমার চড়ুইভাতির মত দুপুরের রান্না হল, চমৎকার এক অভিজ্ঞতা। তবে মজার পাশাপাশি খারাপও লাগছিল ঢাকা-চট্টগ্রামের সেসব পরিবারগুলোর জন্য যারা নিয়মিত গ্যাস সংকটে ভোগে। তাদের কষ্ট আরও বেশি হয়ত।
এই নতুন অভিজ্ঞতা এক নতুন শিক্ষাও দিয়েছে আমাকে। অনেকটা "দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই" ধরণের। একদিন গ্যাস ছিল না বলেই সামান্য হলেও বুঝতে পেরেছিলাম তাদের কষ্ট। যারা এমন পরিস্থিতির শিকার হয় প্রতিদিন।
চল এবার মন থেকে প্রতিজ্ঞা করি। গ্যাস অপচয়কেও না বলি।