এখন বুঝি সেটা হয়ত ভালবাসা ছিল না। শুধু আবেগ ছিল। তারপরও ভালবেসেছিলাম বলে কথা। আবেগই হোক আর ভালবাসাই হোক তাতে কি। আমিতো লেখাপড়া, নাওয়া খাওয়া, খেলাধূলা ছেড়ে ওর পিছেই পড়ে থাকতাম। যদিও ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ছাত্র ছিলাম। মেয়েটিও পড়াশোনা ভাল ছিল। ওর রোল ছিল দুই।
প্রেমে পড়ার পর আস্তে আস্তে আমি লেখাপড়া থেকে সরে যেতে থাকি। কেন জানি আমার সবটা জুড়ে ও বসে থাকত। পড়তে পারি না। কোন কাজে মনও বসে না। এভাবেই দিন যেতে থাকে। আর আমি স্কুলের পরীক্ষাগুলোয় খারাপ করতে থাকি। এজন্য বাসায় কেউ কিছু বললে উল্টো তার সাথেই খারাপ ব্যবহার করতাম।
আমি ক্লাসে আগে কখনো দ্বিতীয় হয়নি । তাই এই খারাপ ফলাফলে মা প্রায় অসুস্থ হয়ে গেলেন। তবুও নিজের ভুল আমার চোখে পড়লো না।
এরপর আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হল। আমি পরীক্ষায় খুব খারাপ করলাম। ফলাফল ঘোষণার দিন দেখা গেল সেই মেয়েটি ক্লাসে প্রথম হয়েছে আর আমি এক বিষয়ে ফেইল করেছি।
পরে একদিন ওর সাথে দেখা করতে গেলাম। আর ওইদিন চুরি করে ওর সাথে থাকা ব্যক্তিগত ডায়েরিটা পড়ে ফেললাম। পড়ে আমি কান্না আটকাতে পারলাম না। শুধু আমাকে টপকে ক্লাসে প্রথম হতেই ও এ কাজটা করেছে।
শুধুই কাঁদলাম। আর কিছুই করার ছিল না। হিংসায় পড়ে ও আমার সাথে এসব করেছে ভাবতেই শিউরে উঠছিলাম। তারপর থেকে আমি আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারিনি।
বাজে ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করি। মাদক আমার বন্ধু হয়ে উঠল। সারাদিন তাস খেলতাম। আর যত খারাপ কাজ আছে সব কিছুতেই জড়িয়ে পড়লাম। কতটা নিচে নেমেছিলাম ভাবলে এখন আমার চোখে জল আসে।
ঘটনা মোড় নিল একদিন রাতে। আমি আমার বন্ধুদের সাথে নেশা করে রাত করে বাড়ি ফিরি। দেখি মা খাবার নিয়ে বসে আছেন। তিনি আমাকে খেতে বললেন। আমি তো খেলাম না বরং তাকে খুব জোরে বকা দিলাম। তিনি রেগে আমাকে একটা চড় মারলেন। অমননি রাগের মাথায় তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই।
সেদিন মা খুব ব্যথা পান। অজ্ঞান অবস্থায় মাকে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হল। দুদিন পর মা সুস্থ হলেন তিনি। তার সাথে আমিও।
মাকে খুব ভালবাসতাম। ওই দুদিন অনুভব করতে থাকলাম আমি কী খারাপ হয়ে গেছি। এ ঘটনার পর আমি আর মাকে কষ্ট দেইনি। কোনদিন মাদক হাতে নেইনি। তবে মার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়নি। এমনিতেই ক্ষমা পেয়ে গিয়েছিলাম।
আরও পড়ুন