আদর্শ শিক্ষকের ধারণা পাল্টে গেছে

আমাদের সমসাময়িক শিশুরা ‘শিক্ষক’ শব্দটি শুনলে চমকে ওঠে। তাদের বেশিরভাগের কাছেই শিক্ষক যেন জ্যান্ত বাঘ। আর কারও কারও কাছে নিতান্ত অবজ্ঞার মানুষ!
আদর্শ শিক্ষকের ধারণা পাল্টে গেছে

শিক্ষককে বন্ধু হিসেবে পাওয়া আর আকাশের চাদঁ হাতে পাওয়া যেন তাদের কাছে একই কথা। অথচ আমার স্কুলে (নালন্দা স্কুল) শিক্ষকদের আমরা ভাইয়া আর আপু বলে ডাকি। তাই ছোটোবেলা থেকেই, টিচার, মিস, ম্যাম এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। আর সমাজে ‘শিক্ষক’ এখন যেভাবে পরিচিত, সে ধারণার সঙ্গেও আমার পরিচয় হয়নি। 

আমার শিক্ষকরা সবসময় বলেন, তারা আমাদের বন্ধু। তাই আমার কাছে শিক্ষক মানেই বন্ধু।

শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে এলে আমাদের মধ্যে তেমন ভয় কাজ করত না। মনে হতো যেন, আমাদের কোনো বড় ভাই বা বোন আমাদেরকে পড়াচ্ছেন। আমাদের শিক্ষকরা আমাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করেন বলে আমরা কিন্তু তাদেরকে কখনও অসম্মান বা অশ্রদ্ধা করিনি। বরং তাদেরকে ভালোবাসতে ও শ্রদ্ধা করতে শিখেছি।

আমার স্কুলের প্রিয় দুজন শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক মিরন ভাইয়া ও রসায়নের শিক্ষক শান্তা আপু। এর মধ্যে মিরন ভাইয়াকে আমি আমার জীবনের আদর্শ মানুষ মনে করি। তাকে আমি সবসময় একটা প্রশ্ন করতাম, বড়রা কেন শিশুদেরকে সহজে বুঝতে পারে না।

ভাইয়া জবাবে বলতেন, ‘বড়রা তাদের ভেতরকার শিশু মনটিকে ক্রমশ  হারিয়ে ফেলেন। ফলে তারা ছোটোদের সহজে বুঝতে পারেন না।

‘আমি শিক্ষকতা পেশায় এসে উপলব্ধি করলাম, শিশু আর প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য বয়সের নয়, দৃষ্টিভঙ্গির বা পার্সপেকটিভের।

‘একটি শিশু প্রকৃতপক্ষে তার বয়সী একজন মানুষ, যার আর সবার মতোই বিচারবোধ এবং সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা রয়েছে। তফাৎ শুধু এটুকুই যে সে এখনও আমাদের সামাজিকতায় অভ্যস্ত হয়ে স্বকীয়তা হারায়নি।’

তার কথা শুনে আমি কতটুকু বুঝেছি বা বুঝিনি, সেটা প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো, অন্যরাও কেনো এরকম করে বোঝেন না?

যদি বুঝতেন, আমার মতো অন্যদেরও শিক্ষককে ভয় পাওয়ার ঘটনা ঘটত না। স্কুলে যেতেও খারাপ লাগত না। কিন্তু আমার ভয় পাওয়ার সমস্যা কাটেনি। আমার স্কুলের বাইরে অন্য শিক্ষকদের আমি ভয় পেতাম।

বাইরের শিক্ষকদের নিয়ে আমার এই ধারণা ভাঙলেন কৃষ্ণদুলাল পাল স্যার। তিন বছর আগে আমার সাথে এই মানুষটির পরিচয় হয়। তিনি আমার গণিতের গৃহশিক্ষক। তিনিই আমার প্রথম গৃহশিক্ষক। এর আগে আমি কোনো শিক্ষকের কাছে পড়িনি।

ছোটোবেলা থেকেই আমার গণিত বিষয়টি একেবারেই অপছন্দ। গণিত করে আমি একবারেই মজা পেতাম না। আমার মনে হতো, একটা বানর তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে কতটুকু উঠল বা নামল, সেটা জেনে আমার কী লাভ?

এসব নিয়ে প্রথম প্রথম আমি স্যারকে নানারকম প্রশ্ন করে অনেক বিরক্ত করেছি কিন্তু স্যার রাগ করতেন না। বরং গণিত বিষয়ে উৎসাহী করার চেষ্টা করতেন। তার চেষ্টাতেই বিষয়টি আমার কাছে মজার হয়ে ওঠে।

আমার এইটুকু জীবনে যে কোনো বিপদে, যে কোনো প্রয়োজনে আমার শিক্ষকরা বন্ধুর মতো আমার পাশে ছিলেন।

বাবার কাছে শুনেছি, তার সময়ের শিক্ষকদেরও তারা ভয় করতেন কিন্তু ভক্তিও করতেন। শিক্ষকরা ছিলেন তার কাছে, তার পরিবারের কাছে আদর্শ মানুষ।  

৫ সেপ্টেম্বর চলে গেল শিক্ষক দিবস। এ দিবসে আমি খুব সহজেই উচ্চারণ করতে পারি, আমার শিক্ষকরা আমার আদর্শ। আমার আশা, সবাই যেন তার শিক্ষকের জীবনকে আদর্শ মেনে বড় হতে পারে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com