ভর্তি হবার পর, প্রথম দিন কলেজের ড্রেস ছাড়াই ক্লাস করেছি। একই ক্লাসে দেড়শ শিক্ষার্থীর সঙ্গে একত্রে ক্লাস করলাম। স্কুলের মতো হৈচৈ তেমন ছিল না বলে মন কেমন করে উঠেছিল।
তবে এই নীরব ক্লাসও ভালো লেগে যায় আমার। প্রথম দিনেই উচ্চতর গণিতের শিক্ষক চমৎকার ক্লাস নেন। আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।
তবে স্কুলের প্রথম দিনের মতো কোনো বন্ধু বানাতে পারলাম না। আগের স্কুলের বন্ধু রানার সাথেই বসেছিলাম।
কলেজে উঠে সবচেয়ে বড় ঝামেলায় পড়েছিলাম বই কেনা নিয়ে। কেউ বলেন অমুক লেখকের বই কেন, কেউবা বলেন অমুক কলেজের তমুক শিক্ষকের বই কেন। এভাবে সপ্তাহ খানেক পেরোলে কলেজের বাইরের লাইব্রেরি লিফলেট অনুযায়ী বই কিনেছিলাম।
কদিন পার হবার পর কয়েক জনের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এদের মধ্যে আশিক মুরাদ, সোহান, হান্নান, মারুফ, সুলতান, জয়, ফয়সাল, সৌখীন রয়েছে।
ফিরে পেয়েছিলাম আগের স্কুলের বন্ধু রানা মুন্সি, সাকিব, নাঈম, আনান, হাসিব, রাফিসহ অনেককেই।
বন্ধুরা সবাই অনেক মিশুক। সোহানের দুষ্টুমি আর রানার হাস্য রসাত্মক কথাবার্তা আমাদের আড্ডা জমে থাকত।
আমি কলেজে যেতাম ট্রেনে চেপে। বাসার কাছের কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে বসতাম। এরপর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে নেমে ৩-৪ মিনিট হাঁটলে আমাদের কলেজ। কখনো কখনো ট্রেন মিস করলে রেল লাইনের পথ ধরে সোজা পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে কলেজে পোঁছতাম। আমি বেশির ভাগ সময়ই ট্রেন মিস করতাম। কারণ, আমি টাইম মেইনটেইন করতে পারতাম না। বদ-অভ্যাসটা থেকে এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
কলেজের টিফিন সময়ে, আমরা কলেজের বাইরে গিয়ে টিফিন খেতাম। টিফিন টাইম শেষ হলে, ক্লাসে ফিরতাম।
২০১৬ এর শুরুটা ভালোই ছিল। তবে প্রথমবর্ষের মাঝামাঝি সময় থেকে আমি অনেক ক্লাস ফাঁকি দিয়েছি। শুধু আমিই না আমার অনেক ক্লাসমেটই ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতো। এমন অনেক দিন দেখেছি ক্লাসের অর্ধেকের কম শিক্ষার্থী ক্লাসে এসেছে, বাকিরা ক্লাসে আসেনি। শিক্ষকরা শুধু তাদেরই ক্লাস নিতেন। শিক্ষকরা কত বার বলতেন নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে! কে শুনে কার কথা! আমিও বাকিদের মতো ছিলাম। অনেক দিন, টিফিন পিরিয়ডের আগ পর্যন্ত ক্লাস করে – বাকি ক্লাস করি নি। ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথ ধরেছি। বাড়িতে ফিরলে মাকে নানা অজুহাত দেখাতাম। খুব ভুল ছিল এটা।
কলেজ জীবনের সময়টা বাবা-মা কেন যেন, স্কুল জীবনের মতো অতো চাপ দেন না! নিজেকেই নিজের মত গড়ে তুলতে হয়েছে। বাবা-মা মাঝে মাঝে শুধু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।