পরিশ্রমেই ফল

ছোট থেকেই বাবার মুখে শুনে এসেছি,‘পরিশ্রম করলে তার ফল পাওয়া যায়।’
পরিশ্রমেই ফল

তবে এ কথাটার মূল্য কতটুকু সেটা আমি বুঝতাম না। কথাটি যে কতটুকু সত্য তা কয়েকদিন আগে চোখে আঙুল দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দেয় দরিদ্র পরিবারের এক শিশু।

প্রায় চার-পাঁচ মাস হলো আমাদের বাসার দারোয়ান পরিবর্তন হয়েছে।নতুন দারোয়ান চাচার নাম মিজান।

আমি তাকে ডাকি ‘মিজান আঙ্কেল।’ মিজান আঙ্কেল খুব ভালো মানুষ। ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের। আঙ্কেলের দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলেটা মাদরাসায় পড়ে এবং মেয়েটা কয়েকদিন হলো মাদরাসা ছেড়ে এলাকার এক স্কুলে ভর্তি হয়েছে। মেয়ের নাম সামিয়া। সামিয়ার বয়স সাত বছর। তার মুখে শুনেছি সামিয়া খুব মেধাবী।

পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ দেখে তার বাবা তাকে মাদরাসা থেকে স্কুলে নিয়ে ভর্তি করেন। সামিয়ার মা আমাদের বাসায় ও অন্য মানুষের বাসায় কাজ করেন।

কিন্তু সারাদিন পরিশ্রম করে আসার পরেও তিনি রাতের বেলা ছেলে-মেয়েদেরকে পড়তে বসান। মিজান আঙ্কেল এর স্বপ্ন তার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে একজন বড় মানুষ হবে।

তিনি আমাকে বলেন, ‘‘আমার ইচ্ছা আমার পোলা-মাইয়া পড়াশোনা কইরা একটা বড় কিছু হইব। কষ্ট কইরাই হোক, আর যেমনেই হোক, আমি আমার পোলা-মাইয়ারে পড়াশোনা করামু।’’

সামিয়াদের বাসা আর আমার ঘরটা এমনভাবে যুক্ত করা যে, ওদের বাড়ির সব কিছু আমার ঘর থেকে শোনা যায়। আমি সবসময় দেখি সামিয়া পড়ছে। সামিয়ার মা তাকে পড়তে সাহায্য করছেন।

হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলেও সামিয়ার পড়া থেমে থাকেনি। সে মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়েছে। তার এই পড়াশোনার পেছনে শুধু সে নয় তার মা-বাবাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও সে তার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছে।

সামিয়ার মাসিক পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর তার মা পরীক্ষার ফলাফলের কাগজটা আমাদের বাসায় নিয়ে আসেন। আমি পরীক্ষার ফলাফল দেখে অবাক! সামিয়া প্রায় সব বিষয়েই পু্রো নম্বর পেয়েছে। সামিয়ার ভালো ফলাফল দেখে তার মার চোখে পানি চলে আসে। এবারের পরীক্ষায় সামিয়া তার ক্লাসে পঞ্চম হয়েছে।

সামিয়ার পরীক্ষার ফলাফল দেখে আমি বাবার কথার প্রমাণ পেলাম। সামিয়া পড়াশোনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল বলেই সে আজ ভালো ফলাফল করেছে। ও আরও অনেক দূর যাক এই কামনা করি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com