দাও ফিরিয়ে শৈশব লহ এই বোঝা

একটি শিশুর জন্মের কিছুদিন পরেই বাবা-মা তাকে ঠেলে দিচ্ছেন নানান প্রতিযোগিতায়। এসব প্রতিযোগিতা শিশুদের মনে সৃষ্টি করছে চাপ। অনেক সময় এ চাপেই নষ্ট হচ্ছে তাদের সুন্দর শৈশব।
দাও ফিরিয়ে শৈশব লহ এই বোঝা

সন্তানকে মানুষ হিসেবে নয়, বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ নম্বরধারী শিশু হিসেবে গড়ে তুলতে কথা ফোটার সঙ্গে সঙ্গে অক্ষর চেনানো, ছড়া, আঁকা বা গান শেখানো শুরু করে দেন। ফলে তারা খেলাধুলার সময় পায় না । এতে করে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশও বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে মনোবিদরা মনে করেন।

এরপর প্রাথমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই অতিরিক্ত প্রস্তুতির জন্য বাড়ির শিক্ষক, কোচিং সেন্টার, বাবা-মার তত্ত্বাবধান সব মিলিয়ে শিশুর প্রাণ হয়ে ওঠে ওষ্ঠাগত। আর মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো মাথার ওপর ঝুলতে থাকে পাবলিক পরীক্ষা।  

রাজধানীর ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম। এবছর সে পিইসি পরীক্ষা দেবে। খেলাধুলার যেন একটুও সময় নেই তার। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করেই তাকে কোচিংয়ে যেতে হয়। এরপর  দৌড় দিতে হয় স্কুলে। স্কুল শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আর বাসায় ফেরার পরই তাকে টিউটরের কাছে পড়তে হয় । এরপর ক্লাসের পড়া করা, হোমওয়ার্ক করা তো রয়েইছে।

এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও সে খেলাধুলার সময় পায় না। এদিনগুলোতে তাকে সকাল ও বিকাল দু’বেলা কোচিং করতে হয়। প্রাথমিকের গন্ডি পার হওয়ার পরও কিন্তু এ চাপ ও প্রতিযোগিতা কমে না, উল্টো বাড়ে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের স্কুলে আরও দুটি পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয়। এছাড়া মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে শ্রেণি পরীক্ষা, সাময়িক পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ও বার্ষিক পরীক্ষা তো ধরাবাঁধা।

এসব পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া ও প্রথম হওয়ার জন্য প্রায় সব বাবা-মাই শিশুর ওপর প্রচণ্ড চাপ দেন।

অনেক বাবা-মা মনে করেন ছবি আঁকা, গান শেখানোর মতো আনন্দের কাজও তো করছে ওরা। কিন্তু সেখানেও প্রতিযোগিতা আর পুরস্কারের যন্ত্রণা আছেই। শুধু নেই আনন্দ। মনের আনন্দে যা খুশি আঁকা বা গাওয়া নয়, নিয়ম মেনে করতে গিয়ে সে সব কাজও পড়ার চাপের মতই ভারি হয়ে ওঠে।

তাই এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও চাপ বন্ধের প্রয়োজন। অভিভাবকদের বুঝতে হবে শিশুরা যন্ত্র নয়। তাই তাদের উপর থেকে চাপ কমাতে হবে। তারা যা করতে পারবে না, তা কখনোই তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। শিশুরা যেন সকল কাজ আনন্দের সাথে করতে পারে, সেটা ভাবতে হবে।

এছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ছিনিমিনি বন্ধের প্রয়োজন। পিইসি পরীক্ষা একবার তুলে নেয়া, আবার রাখা, হঠাৎ করে পরীক্ষায় সৃজনশীল বাড়ানো, এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপের সৃষ্টি করে।

আমার মতে,পিইসি পরীক্ষা তুলে নেয়াই উচিত। কেননা এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেই অভিভাবকেরা অল্প বয়সেই শিশুদের প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com