প্রথম সমুদ্র দর্শন

(শেষ পর্ব) হিমছড়ির দিকে যাত্রা শুরুর আগেই কাকা জানালেন, ইনানী সৈকত থেকে মাইলখানেক দূরেই আরেকটি জায়গা আছে, নাম পাটুয়ার টেক। ঠিক হলো আগে সেখানেই থামব।
প্রথম সমুদ্র দর্শন

নেমেই মনে হলো, এখানে না এলে সত্যিই মিস করতাম। দেখার মতো একটি জায়গা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাথর আর পাথর। সমুদ্রটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। ভেজা বালির উপর কাঁকড়ার পায়ের ছাপ দেখতে পেলাম। অনেক ছবিও তুললাম। বিকেল হয়ে আসছিল। জায়গাটা ছেড়ে যেতে মন না চাইলেও শেষমেশ হিমছড়ির দিকে যাত্রা শুরু করলাম।

হিমছড়ি পৌঁছানোর পর পাহাড়ে উঠার জন্যে বাবা টিকেট নিলেন। তারপর পাহাড় কাটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। একদম খাড়া পাহাড়। শত শত লোক এই পাহাড় বেয়ে উঠছে ঝর্ণা দেখার আশায়।

প্রথমে খুব মজা লাগছিল কিন্তু কিছুদূর ওঠার পর পা যেন আর চলতে চাইছিল না। মা তো হাল ছেড়েই দিয়েছিল। আমি উঠবই। বাবা আর কাকাও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। কিছুক্ষণ উঠি আবার একটু থামি। অবশেষে আমরা একদম উপরে উঠতে পারলাম। উঠেই দেখতে পেলাম সমুদ্রের এক অপূর্ব র্দৃশ্য। পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রটাকে দেখতে অপূর্ব লাগছিল। বিকেলে সূর্যের হালকা আভা সমুদ্রের জলে প্রতিফলিত হয়ে ঝিকমিক করছিল।

চারপাশে সবুজ পাহাড় আর তার ভেতর রাস্তা। আমরা এলাম হিমছড়ি ঝরণার কাছে। খুব হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। বাবা, কাকা ও আমি ডাবের জল খেলাম। মা ও আন্টিও আমাদের সাথে উপরে উঠেছিল। মা ক্লান্ত হয়ে একটা ইটের উপর বসে পড়ল। ডাবের জল খাওয়ার পর ডাবটা যখন ফেলতে গেলাম দেখলাম পাহাড়ের একদম নিচে হাজার হাজার ডাবের খোলা পড়ে আছে। বুঝলাম এখানে যারা ওঠেন তারা প্রায় সকলেই ডাব না খেয়ে পারেন না।  

ঝর্ণার কাছে পৌঁছে মন ভরল না। হিমছড়ি ঝর্ণা সম্পর্কে যা শুনেছি বা পড়েছি তার সাথে তেমন কোন মিল খুঁজে পেলাম না। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। আমরা দেরি না করে পাহাড় থেকে নেমে এসে আবার আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। বিকেল নাগাদ হোটেলে পৌঁছে গেলাম। বেজায় খিদে পেয়েছিল। ভাত খেয়ে খানিক বিশ্রাম নিয়ে আটটার দিকে রাতের সমুদ্র দেখতে বের হলাম।

রাতের সমুদ্রকে অপরূপ আর মায়াবী দেখাচ্ছিল। আঁকাবাঁকা সাদা রেখার মতো ঢেউগুলো তীরে এসে আছড়ে পড়ছিল। ঠাণ্ডা হাওয়া আর সমুদ্রের গর্জন দুয়ে মিলে এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তারপর আমরা গেলাম লাবণী পয়েন্টে। বার্মিজ বাজার থেকে বাদাম ও আচার কিনলাম। হোটেলের পাশে বারবিকিউ পার্টি করলাম। খোলা আকাশের নিচে কয়েকটা ছাতার নিচে  টেবিল পাতা। ডেবিল ঘিরে কয়েকটা করে চেয়ার। গানের ব্যবস্থাও ছিল। মাঠের মাঝখানে প্রজেক্টর দিয়ে গানের ভিডিও চালানো হচ্ছিল ।খুব ভালো লাগলো পরিবেশটা।

মূলত আমার জন্যে এখানে আসা তাই কাকা আমাকে ট্রিট হিসেবে বারবিকিউ ও রাইস খাওয়াল। সকলে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম। পর দিন ভোরে আবার সমুদ্রস্নান করার পরিকল্পনা ছিল। খুব ভোরে উঠতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।

স্নানের সময় আমার এক কাজিনও এলো। ও কক্সবাজার মেডিকেলে পড়ে। সৈকতে নেমেই দেখলাম হাজার হাজার মানুষ স্নান করছে, লাফালাফি করছে, বাচ্চারা পানি নিয়ে, বালি নিয়ে খেলা করছে। মা সমুদ্রে নামতে ভয় পায় তাই গাড়ির টিউব ভাড়া করর মাকে জোর করেই সমুদ্রে নামালাম। মাঝে মাঝেই বড় ঢেউ এসে টিউবসহ আমাদের তীরে ঠেলে দিচ্ছিল। সমুদ্রের লবণ পানি নাকে মুখে ঢুকে যাচ্ছিল। অনেকে আবার  স্পীডবোটে চড়ে বেশ খানিক দূর পর্যন্ত রাইড নিচ্ছিল।

এসব ছেড়ে আসতে মন না চাইলেও সময় ফুরিয়ে আসছিল। সেদিনই আমাদের ফেরার দিন। 

স্নান শেষে হোটেলে ফিরে চেকআউট করে বেরিয়ে গেলাম। সাথে করে কিছু সুন্দর স্মৃতি আর ছবি নিয়ে চট্টগ্রামের পথে বেরিয়ে পড়লাম।

মনে মনে ঠিক করলাম, পরের বার যাব, সেইন্ট মার্টিন’স দ্বীপে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com