প্রথম সমুদ্র দর্শন

এসএসসি পরীক্ষার আগে থেকেই ঠিক ছিল পরীক্ষা শেষ হলে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার। তর সইছিল না, কবে পরীক্ষা শেষ হবে আর কবে সমুদ্রের কাছে যাবো। জল ছোঁব আর প্রাণ ভরে ঝাঁপাঝাঁপি করব।
প্রথম সমুদ্র দর্শন

পরীক্ষা শেষ হতেই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পরিবারের সবার সাথে বেড়াতে বেরিয়ে পড়লাম।

জীবনের প্রথম সমুদ্র দেখতে যাচ্ছি। আর যেই সেই সমুদ্রতীরে নয়, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এর বিস্তৃতি ১২০ কিলোমিটার। ভাবলেই রোমাঞ্চ জাগে।

চট্টগ্রাম থেকে খুব ভোর ভোর বাসে উঠলাম। তিন ঘণ্টার এই বাস সফরে উপভোগ করলাম পথের দু’পাশের প্রকৃতি ও দ্রুত সরে যাওয়া মানুষ জন। ‍সবচেয়ে ভালো লাগল কর্ণফুলী ব্রিজ। তারপর এলো রামুর রাবার বাগান, ডুলাহাজরার সাফারি পার্ক। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ফুরিয়ে গেল পথ। 

সকাল দশটায় সুগন্ধা পয়েন্টে পৌঁছালাম। এর আগে পার হয়েছি কলাতলী আর লাবণী পয়েন্ট। এই তিনটিই কক্সবাজারের মূল পয়েন্ট।

বাবার পরিচিত জনকে দিয়ে আমাদের হোটেল বুক করে রাখা হয়েছিল। ওই পরিচিত আঙ্কেল আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিলেন। রাস্তায় হোটেল ও রেঁস্তোরা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ল না। হোটেলে চেক ইন করতে একটু দেরি আছে তাই আমরাও বেরিয়ে পড়লাম সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করতে।

খিদেও পেয়েছিল। একটা রেঁস্তোরায় সকালের নাস্তা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় (টমটম) চড়ে রওয়ানা হয়ে গেলাম ইনানী সৈকতের দিকে।

কলাতলী পয়েন্ট থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ। রাস্তাটির নাম মেরিন ড্রাইভ। আমাদের টমটম চলছে কালো রাস্তার বুক চিরে। ডান পাশে সমুদ্র আর বাম পাশে পাহাড়। মাঝে মাঝে সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে। নয় কিলোমিটার দূরে হিমছড়ি আর সেখান থেকে আরও ২০ কিলোমিটার দূরে ইনানী সৈকত।

এটি ইনানী পাথর সৈকত নামে পরিচিত। পথের চারপাশে কয়েকটি ছোট ছোট ঘরও দেখতে পেলাম। সেখানকার স্থানীয় মানুষরা নানা কাজে ব্যস্ত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাচ্ছে। এত কাছ থেকে সমুদ্র দেখা আমাদের কাছে রোমাঞ্চকর হলেও এই এলাকার শিশুরা সমুদ্রের সাথে খুব পরিচিত। সমুদ্রের এই বিচিত্র প্রকৃতিই তাদের নিত্যসঙ্গী। দিনের আবহাওয়া ছিল খুব সুন্দর। সে ছিল এক বিচিত্র অনুভূতি। আমরা পথেই হিমছড়ি পয়েন্ট দেখলাম। বহু পর্য্টকের ভিড় সেখানে। ঠিক হলো ফেরার পথে এখানে নামব। হিমছড়ি পার হয়ে ইনানী সৈকত পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেল। টমটম থেকে নেমে সৈকতে পা দিলাম। চারপাশে অনেক দোকান। রকমারি সব জিনিস বিক্রি হচ্ছিল সেখানে। পর্যটকের ভিড় ছিল দোকানে। বেলা বাড়তেই সৈকতের বালি গরম হয়ে গিয়েছিল। সেই গরম বালির ওপর দিয়ে হেঁটে আমরা সমুদ্রের জলের কাছাকাছি গেলাম।   

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সমুদ্রে নামার সময় এসে গেল। তার আগেই আমরা রোদ চশমা আর টুপি কিনেছি। কারণ আগেই জেনেছি, জলে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মিতে খুব তাপ। সেই তাপে গায়ের রঙ পুড়ে কালো হয়ে যায়।

একটা ছাতার নিচে মায়ের কাছে সবকিছু জমা রেখে বাকি চারজন দৌড়ে প্রথমে পানিতে পা ভিজালাম। উত্তেজনা দ্বিগুন হয়ে গেল। কেউ সাঁতার কাটছেন, কেউ বসে আছেন ছাতার ছায়ায়। কেউ ব্যস্ত সমুদ্র স্নানের ছবি তুলে রাখতে।

আমরাও অনেক ছবি তুললাম। সমুদ্রের পানিতে স্নান করলাম। জোয়ারের সময় নেমেছিলাম তাই ঢেউয়ের ঝটকা বারবার তীরে এসে আছড়ে পড়ছিল। খুব মজা লাগছিল। শুধু একটু হতাশ হলাম। কারণ পাথর সৈকতে এসে একটা পাথরও দেখতে পেলাম না। কিন্তু একটু পরেই আমাকে আনন্দে ভরিয়ে দিয়ে দূরে পানিতে পাথর ভেসে উঠল। দৌড়ে পাথরের কাছে গেলাম। পাথরের উপর বসে, দাঁড়িয়ে অনেক ছবি তুললাম। তবে একটু সাবধানে কাজটি করতে হলো। কারণ পাথরগুলো খাঁজকাটা। পা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ভাঁটার সময় সতর্ক থাকতে পাড় থেকে কয়েকজন লাইফ গার্ড বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। বাঁশি শুনে আমরা সমুদ্র থেকে উঠে পড়লাম। তারপর ছাতার নিচে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। এক ঘণ্টা বিশ্রামের জন্যে ছাতাওয়ালাকে ত্রিশ টাকা দিতে হয়। ভোরের নাস্তা এই ঝাঁপাঝাঁপিতে কখন হজম হয়ে গেছে। তাই সবাই মিলে ঝালমুড়ি খেলাম খুব মজা করে। এরপরে যাত্রা শুরু হলো হিমছড়ির দিকে। (চলবে) 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com