শৈশবের প্রেম ও কিছু কথা

প্রেম, ভালোবাসা এই শব্দগুলো ছেলেবেলাতেই শিখে ফেলি। কারণ এসব শব্দ শোনা বা উচ্চারণে ছোটোদের জন্য যেন ট্যাবুর মতো করে ফেলেন বড়রা। আর তাই সেটাতেই আগ্রহ থাকে বেশি।
শৈশবের প্রেম ও কিছু কথা

আমার তো স্পষ্ট মনে পড়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময়ই আমি আমার এক মেয়ে বন্ধুকে আমার প্রেমিকা ভাবতে শুরু করি। খুব ভালো লাগতো মেয়েটাকে। আমি ক্লাসে ফার্স্ট বয় ছিলাম। হয়তো সেই জন্যই মেয়েটাও আমার সাথে মিশত। আমার পাশেই বসতো। মেয়েটা গানও শিখত আর তাই কখনও সখনও আমাকে গানও শোনাত। সেই সময়গুলো ছিল অসাধারণ।

মেয়েটি পড়াশোনায় দিন দিন ভালো করতে লাগল। আমার গর্বই হচ্ছিল। হঠাৎ ক্লাস টুতে উঠতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, ও ক্লাসে প্রথম হয়েছে আর আমি পঞ্চম। রেজাল্ট কার্ড হাতে সেদিন বেশ অসহায় লাগছিল নিজেকে।

সেই ছোট্ট প্রেমিক বেশ বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছিল তার ছোট্ট প্রেমিকার কাছ থেকে। কী আনন্দ মেয়েটির! আমার পাশে এসে একটু সমবেদনাও জানাল না। খুব রাগ লাগল। কষ্ট হল। বাড়ি ফিরে একটু কাঁদলামও। কিন্তু কী আর করা!

তবে হ্যাঁ, আমার সেই প্রেমটা বড্ড নীরব প্রেম ছিল। মেয়েটাকে এমনকি কখনও ‘আই লাভ ইউ’ বলিনি, কারও সাথেই কিছু শেয়ারও করিনি। কিন্তু আবহটা প্রেম প্রেম গন্ধে ছিল ভরপুর।

মনে পড়ে, ডায়েরিতে মাঝে সাঝে লিখতাম ওকে নিয়ে। কিন্তু ওই বিশাল ধাক্কার পর রাগে আর ক্ষোভে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম ওকে নিয়ে লেখা পাতাগুলো।

আর একটি ঘটনা। আমার ক্লাসে টিচার একদিন একটা চিরকুট আবিষ্কার করেছিলেন। সেই ক্লাস ওয়ানেরই ঘটনা। আমার এক সহপাঠী সেখানে লিখেছিল তার পছন্দের এক মেয়ের কাছে ভালোবাসার নোট। সেখানে দুজনের নাম দুটো  খুব সুন্দর করে লেখা। আর তাই কে কাকে লিখেছে তা উদ্ধার করতে টিচারের মোটেই বেগ পেতে হলো না। বিচারে যথারীতি শাস্তি পেল বেচারারা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রেম ভালোবাসা বিষয়গুলোতে ছোট থেকেই আমরা আগ্রহী হয়ে পড়লাম কেন? এখনও কিন্তু অহরহ দেখছি আমরা, এই বিষয়ে পিচ্চি স্কুল গোয়িং ছেলে মেয়েগুলোর আগ্রহ, দুর্বার আকর্ষণ। মাত্র ৪ বছর বয়সী আমার কাজিন প্লে গ্রুপে পড়ে এক স্থানীয় স্কুলে। বাসায় ফিরে প্রায়ই আমার সাথে শেয়ার করে ওর বান্ধবীর কথা। বান্ধবী ওর পাশে না বসলে নাকি বেচারার ভালোই লাগে না। কত্ত এডভান্সড হয়ে পড়েছি আমরা! ভাবা যায়?

নিশ্চয়ই একটু বড় বয়সের যারা এই লেখাটি পড়ছেন, হয়তো ভাবছেন সব পরিবারের দোষ। পরিবার দেখে রাখতে পারে না ছেলেমেয়েদের?  হয়তো হিন্দি কিংবা বাংলা সিরিয়াল, ঢালিউড-বলিউড-হলিউড সিনেমার কাহিনীগুলোকে গালাগালি করবেন। শিশুদের জন্য নির্মিত এনিমেশন মুভিগুলোকেও আবার বাদ দেবেন কি করে? টম এন জেরি সিরিজ থেকে শুরু  করে আলাদিন, ডোরেমন- সব গুলোতেই পরিচালকেরা সাগ্রহে ব্যবহার করছেন রোমান্টিক কেমিস্ট্রি! তাহলে?

তাই আমার মনে হয়, শিশুদেরকে এসব ইস্যু থেকে অন্ধকারে না রেখে সহজভাবে মানিয়ে নেওয়াই ভালো। পরিবারে, স্কুলে এমনকি সামাজিকভাবেও এমন আবহ তৈরি করা যাতে করে শিশুরা কোনোকিছু গোপন করতে না শেখে। নিজের আবেগ-অনুভূতিগুলো সহজ করে বলতে পারে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের তরুণ মোটিভেশনাল বক্তা মাশাহেদ হাসান সীমান্ত বলেন, ‘মানুষের ম্যাচিউরিটি আর দায়িত্ববোধের অনেকটাই আসে রোম্যান্টিক সম্পর্কগুলো মোকাবিলা করতে করতে।’

তথ্য-প্রযুক্তির এই অবাধ যুগে ইন্টারপার্সোনাল রিলেশন নিয়ে অনেক কিছুই জানে শিক্ষার্থীরা।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, বছরের প্রথম দিন নতুন বইয়ের সেট হাতে পাওয়া মাত্র প্রথম কাজ হয় শারীরিক শিক্ষা কিংবা গার্হস্থ্য অর্থনীতি বইয়ের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যায়টা মন দিয়ে পড়ে ফেলা। এই কৌতূহল দোষের কিছু নয়। সে বিষয়টি পড়াতে বা আলোচনা করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জড়তা ও সংকোচের বিষয়টি আমার কাছে অবৈজ্ঞানিক মনে হয়। কারণ এসব ইস্যুতে শৈশব-কৈশোরের জটিলতাগুলো গোপন করে রাখতে গিয়ে বা সঠিক সমাধান না পেয়ে একজন শিশু বিপথে চলে যেতে পারে। এর প্রভাব হতে পারে নেতিবাচক। যেমন হয়েছিল আমার দ্বিতীয় শ্রেণির পরীক্ষার ফলে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com