‘তৈরি করতে হবে এক পৃথিবী, এক মানবতা’

কয়েক দিন আগের কথা। আমি তখন স্কুলে। স্কুলে হঠাৎ মায়ের ফোন। ধরতেই মা বললেন, ‘তোমার এক্ষুণি বাসায় আসতে হবে। হ্যালো থেকে তোমার ফোন এসেছে। হ্যালোর অ্যাসাইনমেন্টে আজ বিশেষ এক জায়গায় যেতে হবে!’
‘তৈরি করতে হবে এক পৃথিবী, এক মানবতা’

মা আর কিছুই বললেন না। শিক্ষকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমি দ্রুত বাড়ি চলে এলাম। এসেই জানলাম ইন্টারভিউ নিতে যেতে হবে কৈলাশ সত্যার্থীর কাছে। তিনি এখন ঢাকাতেই।

প্রথমে খানিকটা অবাক হলাম। তার মতো ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ ঘটায় মনে মনে অনেক আনন্দিতও হলাম।

কয়েকদিন আগেই বাবার মুখে শুনেছিলাম শিশু অধিকার কর্মী ও নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থীর কথা। যিনি কাজ শুরু করছেন বাংলাদেশের শিশুসহ দশ কোটি শিশুর জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে। শুনে তখনই তার প্রতি আগ্রহী হই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ তৈরি হবে ভাবতেও পারিনি। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, ‘তাহলে কী আসলেই আমার ইচ্ছে পূরণ হলো?’

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। পরিকল্পনা মতো হ্যালোর আরেক সাংবাদিক সাকিরসহ আমরা গুলশান-দুই নম্বরের এক হোটেলে কৈলাশ সত্যার্থীর সাক্ষাৎকার নিতে উপস্থিত হলাম।

ভেতরে ভেতরে খুব উত্তেজিত ছিলাম তার মতো একজন মানুষের মুখোমুখি হবো ভেবে। অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরেই উনি এলেন। ভেবেছিলাম তিনি খুব গম্ভীর একজন মানুষ হবেন। কিন্তু তার সাথে দেখা হওয়ার পর, এই ভুল ধারণাটা ভেঙে গেল। 

প্রথমে তো বুঝতেই পারিনি যে তিনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার মনে হচ্ছিল আমি একজন পরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের দুজনের সাথে দেখা হওয়ার সাথে সাথেই তিনি তার হাত বাড়িয়ে দেন পরিচিত হওয়ার জন্য। তার ব্যবহার দেখে আমার মনে হলো, তিনি শিশুদের সাথে কথা বলতে খুব ভালোবাসেন। 

পরিচিত হওয়ার পর, তার কাছে আমার প্রশ্নটা ছিল ‘হিজড়া শিশুদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে।’

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকেই হিজড়াদেরকে ঘৃণা করি। কিন্তু এটা উচিত নয়। কারণ তারাও আমাদের মতো মানুষ। হিজড়া হওয়ার পেছনে তাদের নিজেদের কোন দোষ নেই। কারণ এটা যে কারোর সাথে হতে পারে। এটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে ও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’

শিশু সাংবাদিক সাকির প্রশ্ন করেছিল ‘সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে।’ এ বিষয়ে কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, ‘তুমি হিন্দু বা খ্রিস্টান বা মুসলিম এটা তোমার পরিচয় না। তোমার আসল পরিচয় হলো তুমি বাংলাদেশি। আমাদের সমাজের অনেক মানুষই মনে করে যে, তার পরিচয় তার ধর্মে। কিন্তু মানুষের এ ধারণাটা তোমাদেরকেই পাল্টে দিতে হবে। তৈরি করতে হবে এক পৃথিবী, এক মানবতা।

আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে তিনি আমার সাথে হাত মিলিয়ে ও সাকিরকে পিঠ চাপড়ে দিলেন।  বললেন, ‘এই দিনটার কথা আমার মনে থাকবে।’

তিনি এই কথা বলে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। বাসায় আসার পর কৈলাশ সত্যার্থীর একটা কথাই শুধু কানে বাজছিল, ‘তোমাদেরকেই তৈরি করতে হবে এক পৃথিবী, এক মানবতা।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com