কুয়াকাটায় একদিন

ভ্রমণ আমাদের পরম আনন্দ দেয়। অন্তত যারা ভ্রমণপিপাসু তাদের কাছে ভ্রমণ স্বর্গীয় ব্যাপার।
কুয়াকাটায় একদিন

এক পশলা বৃষ্টির মতো শুষ্ক নিরানন্দ জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয় ভ্রমণ।

তাই তো সময় পেলেই আমি বেরিয়ে পড়ি। পছন্দের জায়গাগুলো ঘুরে দেখি। আমার মনে হয় শুধু পাঠ্য বইয়ের শিক্ষা আমাদের মনকে যথাযথ ভাবে গড়ে তুলতে পারে না। প্রকৃতির শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।

এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আমরা গিয়েছিলাম কুয়াকাটা। সকাল নটায় যাত্রা শুরু করলাম। আমার মনে হচ্ছিল পথ শেষ হচ্ছে না। মনে হচ্ছিল কখন পৌঁছুব! সময় কাটানোর জন্য বই খুলে বসলাম। শরৎচন্দ্রের দারুণ একটা উপন্যাস পড়লাম। আহ কি আনন্দ।

এক অসাধারন সুখানুভূতি আমার মনে খেলে যাচ্ছিল। কল্পনায় আমি আগেই কুয়াকাটা পৌঁছে গিয়েছিলাম। তবে সত্যি সত্যি কুয়াকাটা পৌঁছাতে আমাদের সন্ধ্যা ৭ টা বেজে যায়।

ঐদিন আর আমাদের সূর্যাস্ত দেখা হলো না।  আফসোস নিয়ে আমরা পর্যটন মোটেলে চেইক ইন করলাম।  রাতে খাবার খাওয়ার  পর ১২ টার দিকে সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিলাম। কি দারুণ বিশালতা! 

এই আমার জীবনের প্রথম সমুদ্র দর্শন। প্রথম দর্শনেই সমুদ্রের অমোঘ প্রেমে পড়ে গেলাম। রাতের সমুদ্র যেন আরও উদার, আরও বিশাল, আরও আপন।

ঝিরিঝিরি হাওয়া আর তারার সাথে খেলতে খেলতে সমুদ্রের ডাক শুনতে পেলাম। মুগ্ধতার ঘোর কিছুতেই কাটতে চাইছিল না।

ভোরে যে সূর্যোদয় আমাদের দেখতেই হবে।  সমুদ্রের পানির ভেতর থেকে বের হয়ে আসে এক রক্তাভ সূর্য। এ দৃশ্য যে সত্যিই উপভোগ্য।  ভোর ৪.৩০ কাউয়ার চরের উদ্দেশ্য আমরা রওনা হলাম।  সূর্যোদয় কাউয়ার চর থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।  ভোরের শিশির আর কুয়াশা গায়ে মেখে কেওড়া আর ঝাউবন দেখতে দেখতে চলে গেলাম কাউয়ার চরে। 

যখন পৌঁছেছি তখন সূর্যি মামা একটু একটু করে সমুদ্র থেকে উঠে এল।  আমার চোখ যেন সার্থক হলো।

ফেরার পথে লাল কাঁকড়া দেখলাম। দু’হাত ভরে ঝিনুক কুড়ালাম, ঝাউবনে ঘুরলাম। আহ কি আনন্দ! এরপর গঙ্গামতির চর দেখলাম, ইলিশ পার্কে গেলাম। বৃহৎ আকৃতির সীমা বৌদ্ধ বিহার দেখলাম। 

কুয়াকাটার সবচেয়ে পুরনো কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন এই বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের  বিশালঅষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি। সীমা বৌদ্ধ বিহারের পাশে রয়েছে পুরাতন একটি কুয়া। 

রাখাইন পাড়ায় গিয়ে অভিভূত হয়ে রাখাইনদের তৈরি জিনিস, বিশেষ করে ওদের হাতে তৈরি পোশাক দেখলাম। আমি একটা ফতুয়া কিনলাম। এরপর সমুদ্র স্নানের পালা।  আমরা সবাই পরম আনন্দে সমুদ্রের জলে নিজেকে ভাসিয়ে দিলাম।

এতো আনন্দের মাঝে একটা আফসোস রয়েই গেল। সময় স্বল্পতার জন্য সূর্যাস্তটা দেখা হলো না। তারপরও একরাশ আনন্দ আর মজার মজার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com