যখন দেশের বাইরে গিয়ে অন্য সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিশলাম তখন বুঝলাম তাদের সঙ্গে বাঙালির পার্থক্য। কতটা আবেগ, ভালোবাসা আর স্নেহপরায়ণ আমরা তাদের সঙ্গে না মিশলে জানাই হতো না।
রাশিয়ার কথাই যদি বলি তাদের মধ্যে তেমন আবেগ নেই। কারো সাথে ঝগড়া হলে পরে যে তার রাগ ভাঙাতে হয় এটা তারা হয়তো জানেই না। একদিন দেখলাম রাশিয়ান একটা মেয়ে কাঁদছে। তার খুব মন খারাপ। অথচ পাশেই তার বন্ধুরা হুড়োহুড়ি করছে, খেলছে, গল্পও করছে।
আরেকদিন দেখলাম একজন রাশিয়ান ছেলে মন খারাপ করে একা বসে আছে। কিন্তু তাকে যে সান্ত্বনা দিয়ে নিজেদের মধ্যে নিয়ে তার মন ভালো করবে সেটা তাদের খেয়ালই নেই। বরং তার মন খারাপ দেখে আমাদের কষ্ট লাগছিল। আমরা তাকে আমাদের সাথে বসিয়ে খাবার খেলাম, কথা বললাম, তার মন ভালো করার চেষ্টা করলাম। আমরা কখনও কল্পনাই করতে পারি না যে একজন বন্ধু সাথে থাকা অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে নিজেরা ভালো থাকা যায়।
আরেকদিন কাযাখস্তানের একজন অফিসারের ক্যামেরার চার্জার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি খুব অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ভাবছিলেন কি করা যায়। আর এদিকে তার এই সমস্যার কথা শোনা মাত্রই আমরা অস্থির হয়ে তার জন্য চার্জার যোগাড় করার চেষ্টা করলাম। ভিয়েতনামের একজনের কাছ থেকে চার্জার এনে তাকে দিলাম। তিনি খুব খুশি হলেন।
আরেকদিন এক ভিয়েতনামের অফিসার রাস্তা ভুলে হারিয়ে গেলেন। অনেক সময় পরেও যখন তিনি ক্যাম্পে ফিরছিলেন না তখন বাঙালি অফিসারদের উদ্বেগ দেখে আমার বারবার মনে হলো, এই তো বাংলাদেশের ভালোবাসা। বাঙালিকে কি এমন না হলে মানায়?
আমরা হয়তো তাদের মতো এত উন্নত এখনও হইনি কিন্তু এটা মানতেই হবে যে আমরা বন্ধুপরায়ণ, ভালোবাসতে জানি। তার মানে এই নয় যে তারা ভালোবাসে না বা কাউকে সাহায্য করে না। তাদের প্রকাশটা অন্যরকম, আমাদের মতো এতটা নয়।