ইঁদুর নয়, মানুষ হতে চাই

প্রাবন্ধিক মোতাহার হোসেন চৌধুরী তার ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মানুষের জীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘জীবসত্তা’ সেই ঘরের নিচের তলা আর ‘মানবসত্তা’ বা ‘মানুষ্যত্ব’ ওপরের তলা। জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা।
ইঁদুর নয়, মানুষ হতে চাই

এই শিক্ষাই আমাদের মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশে এতটাই অসুস্থ প্রতিযোগিতার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে প্রকৃত শিক্ষার দিকে কেউ খেয়াল করছে না। এক ইঁদুর দৌড়ে সামিল হয়েছে সবাই। কিন্তু ইঁদুর নয়, মানুষ হতে চাই। 

আমরা জানি, শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য সমাজ অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের সহায়তায় একটি শিশু বেড়ে ওঠে। দেশে এই শিশুদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কিন্তু এদের কথা শুনতে চান না প্রায় কেউই। তাদের জীবনের সব সিদ্ধান্তই নেন বড়রা। এমন কি তাদের মত না নিয়েই বা অমত সত্ত্বেও।  

তাই শিশুরা পড়েছে এক নিরুপায় অবস্থায় মধ্যে। এখন শহর থেকে গ্রাম সব জায়গার অভিভাবকরাই শিশুদের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এর হাত থেকে তিন বছরের শিশুও রক্ষা পাচ্ছে না।  

প্রথমে ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া তারপর এ প্লাস পাওয়ার প্রতিযোগিতা। এরপরে মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলে অভিভাবকদের। তারই মাঝে অসহায় শিশুরা মা বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য পড়ার চাপ সহ্য করে মুখ বুজে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার মাঝে হারিয়ে যায় অনেক শিশুর মানুষ হয়ে ওঠা। এই চাপে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগও হারিয়ে যায়।

বাবা-মা এটা করতে গিয়ে ভুলে যান, তাদের স্বপ্ন পূরণের ক্ষমতা শিশুটির আছে কি না। যাদের এ ক্ষমতা নাই, তাদের শুনতে হয় নানা গঞ্জনা। ‘এর ছেলে গোল্ডেন জিপিএ পাঁচ পেয়েছে, তার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে,’ এসব শুনতে শুনতে পড়ালেখার প্রতি শিশুদের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়। তারা হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে, হতাশ হয়ে পড়ে। এদেরই একটা অংশ বিপথে চলে যায় বা মাদক আর কুসংসর্গে তাদের ভবিষ্যতের দুয়ারে পড়ে কাঁটা। 

বাবা-মা বা অভিভাবকরা যদি সন্তানের যোগ্যতা বা ধারণ ক্ষমতার ব্যাপারে বিবেচক হন বা একটু খতিয়ে দেখেন, তাহলে বর্তমান ইঁদুর দৌড়ে সন্তানকে দৌড় না করিয়ে ও নিজেরাও না ছুটে, মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার কথা ভাবেন, তাহলে সংকট অনেক কমে যাবে।  

কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা বা মানুষ হওয়া থেকে মানুষের দৃষ্টি সরে গিয়েছে। তারা যতটা এ-প্লাস, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার চান, মানুষ ততটা বোধ হয় নয়।

আমি নিজেও খুব সাধারণ ছাত্রী। এরকম সংকটে আমাকেও ভুগতে হয়। তাই রাষ্ট্রের শিক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অভিভাবকদের কাছে আমার মতো যারা, তাদের হয়ে অনুরোধ করছি, শিশুদের জন্য প্রকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করুন। আমাদের মানুষ হওয়ার পথ সুগম করে দিন। পেশা কী হবে সেটি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।    

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com