স্বপ্নের পথ বন্ধুর

ক্রিকেট খেলা দেখতে বরাবরই ভাল লাগত। আর বাংলাদেশের খেলা হলে তো কথাই নেই। খেলার খবর পরিবেশনের গুণেই মজার হয়ে উঠত। এছাড়াও টেলিভিশনে বিভিন্ন স্টেডিয়াম থেকে সরাসরি রিপোর্টারদের দেখে আর বিবৃতি শুনে তাদের জীবনটা খুব টানত আমায়। তখন থেকেই মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, বড় হয়ে সাংবাদিকই হবো।
স্বপ্নের পথ বন্ধুর

একটু বড় ক্লাসে উঠে জানতে পারলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে একটি বিভাগই রয়েছে। আরও জানলাম সাংবাদিকতা কলা বিভাগের একটি সাবজেক্ট। তাই নবম শ্রেণিতে ওঠার পর ঠিক করলাম যে কলা বিভাগেই ভর্তি হব। কিন্তু তখন জানতে পারলাম যে, আমার স্কুলে কলা বিভাগে হাতে গোনা কয়েকটি ছাত্র ভর্তি হয় বলে কয়েক বছর আগেই বিভাগটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মনটা খানিক দমে গেল। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়েই পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু পদার্থ, রসায়ন আর গণিতের কঠিন সব সূত্র একদমই ভাল লাগত না। তখন ভাবতাম, কোনোভাবে এসএসসি পার করে কলেজে উঠলেই কলা বিভাগে ভর্তি হয়ে যাব। জটিল এসব পড়াশুনা তখন আর করতে হবে না। পারিবারিক চাপে এইচএসসিতেও বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে হলো। কিন্তু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সাংবাদিক হতেই হবে।

এরই মাঝে ২০১৩ সালে, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় এসে নিজের পছন্দের একটি রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলাম। নওগাঁর কমিউনিটি রেডিও বরেন্দ্র রেডিওতে কাজ শুরু করলাম। শুরুতে শিশুতোষ একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার দায়িত্ব পাই। মাস ছয়েক পর থেকে নিয়মিত ভাবে রেডিওটির অনুষ্ঠান আর সংবাদ বিভাগে কাজ শুরু করে দিই।   

কিছুদিন পর পত্রিকায় ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০১৪’র বিজ্ঞপ্তি দেখে, বরেন্দ্র রেডিও’তে প্রচারিত আমার রচিত ও পরিচালিত একটি নাটক পাঠাই। কিন্তু তখন কল্পনাও করিনি যে, আমার ওই নাটক সৃজনশীল রেডিও অনুষ্ঠান ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়ে যাবে। একই ক্যাটাগরিতে পরের বছর ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড তৃতীয় হই। রেডিওর সাফল্যে পরিবার ও বন্ধুমহল থেকে বেশ উৎসাহ পেতে থাকি।

রেডিওর কাজের পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে নওগাঁর এক স্কুল শিক্ষকের নেতৃত্বে আমি এবং কয়েকজন শিশুকিশোর মিলে ‘ফড়িং’ নামের একটি ত্রৈমাসিক শিশুতোষ পত্রিকা বের করে ফেলি। রেডিও আর পত্রিকার কাজের মাঝেই ২০১৫ সালে সৌভাগ্যক্রমে কাজ করার সুযোগ পেলাম বিশ্বের প্রথম বাংলা  অনলাইন নিউজ পোর্টাল হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে।

হ্যালোর সাথে কাজ শুরুর পর থেকেই আমার সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। প্রথম যেদিন আমার লেখা প্রতিবেদনটি ছাপান হলো তখন সেটি আমার বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব আর পরিচিত কত লোকজনকে যে দেখিয়েছি তার হিসেব নেই!

দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতির সময় এসে গেল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলাম না। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলাম, সাংবাদিকতায় নয়, নাট্যকলা বিভাগে। নাট্যকলায় ভাল ক্যারিয়ার গড়া যায়না বলে পরিবার থেকে সেখানে ভর্তির অনুমতি মিলল না।

তবে আমার ইচ্ছার প্রতি তারা একেবারেই দাম দেননি তা নয়। ছোটোবেলার স্বপ্নের কথা ভেবেই তারা এতদিনে আমাকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি করে দিলেন। পড়াশুনা শেষ করে সাংবাদিকতায় স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তে চাই।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com