আমাদের সঙ্গে কোনো গাইড নেইনি। এতে খুব একটা কষ্ট হয়নি। বরং ভালো হয়েছে। আমরা ইচ্ছেমতো ঘুরতে পেরেছি। আমাদের কাছে সব কিছুই নতুন ছিল। রাস্তার বাঁকে বাঁকে নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছি।
শীতকালে ঝর্ণায় পানি থাকে না বলে পর্যটকও তেমন নেই। ঝর্ণা ভ্রমণে আমাদের মাত্র একদল পর্যটকের সঙ্গে দেখা হলো।
বাকি পথ শুধুই নীরবতা। এই নীরবতা আমাকে বেশ স্বস্তি দিচ্ছিল। শহরের কোলাহল থেকে একটু মুক্তির স্বাদ।
আমরা ধীরে ঝর্ণার পানির রেখা ধরে ঝর্ণার খোঁজে এগুতে থাকি। এর মাঝে আমাদের একটা পাহাড়ও পেরুতে হয়। এই পাহাড় আর চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের বুকে সিঁড়ি আছে আর এ পাহাড়টা সম্পূর্ণই উঁচু নিচু ঢালু পথের। যা আমাদের যাত্রা পথে জোগাচ্ছিল নতুন মাত্রা।
তবে আমাদের শহুরে শরীর বেশিক্ষণ এই পরিশ্রম সহ্য করতে পারল না। আমরা আবার গতদিনের মতো ক্লান্ত হয়ে যাই। তবুও চলছিলাম ঝর্ণা দেখার লোভে। অবশেষে আমরা প্রথম ঝর্ণার দেখা পাই। এই ঝর্ণাটা আকারে একটু ছোট আর যেহেতু শীতকাল তাই পানির প্রবাহ বেশ কমই ছিল। তবুও মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার জন্য যথেষ্ট।
ঝর্ণার পাশে বেশ খানিকটা সময় কাটালাম। এত স্নিগ্ধ ভালো লাগা তৈরি হলো যে কথায় প্রকাশ করা যাবে না। ঝর্ণার ছবি তুললাম, ঝর্ণা জলে ফ্রেস হলাম।
এরপর শুরু হলো পরের ঝর্ণা খোঁজ। গাইড না থাকায় একটু ঝামেলা হলো বৈকি। রাস্তা জানা নেই। যাত্রাপথের পর্যটকের কাছে যেটুকু জেনে নিয়েছিলাম তাই ভরসা।
সেই আবছা ধারণা থেকেই চলছিল হাঁটা। যাওয়ার পথে একজন আদিবাসীর দেখা পেলাম। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু উত্তর পেলাম না।
বেশ খানিকটা পথ হাঁটার পরও যখন ঝর্ণা খুঁজে পেলাম না তখন বেশ হতাশ লাগছিল।
হাতে তখন দুইটা রাস্তা এক ফিরে আসা দুই যেভাবেই হোক ঝর্ণা খুঁজে বের করা। অনেক ভেবে ঠিক করলাম ঝর্ণা খুঁজে বের করব।
কিছুদূর যাওয়ার পড় আমরা পথ হারিয়ে ফেললাম। সেটা নিয়ে আমার আর শোভনের মাঝে তর্ক লেগে গেল। আমি বলেছিলাম এক পথ ও বলেছিল আরেকপথ। দুজনের কথাতেই যুক্তি ছিল। আমরা দুই পথেই কিছুদূর করে কয়েকবার এগুলাম কিন্তু ঝর্ণার খোঁজ পেলাম না।
তারপর শোভনের নির্ধারিত পথ ধরে আমরা এগোতে থাকলাম। সামনে আসলে কি আছে তা জানি না। বেশ রোমাঞ্চকর লাগছিল। যাওয়ার পথে ছোট বড় অনেক পাহাড় চোখে পড়ল। যত এগোচ্ছিলাম ঘন বন জঙ্গল চোখে পড়ছিল। (চলবে...)