তারপর যাত্রা শুরু করলাম। বলে রাখা দরকার দুপুর দিকে হওয়ায় শীতের মধ্যেও বেশ রোদ ছিল। আমরা যতই উপরে উঠি ততই ফিরে আসা মানুষের করুণ অবস্থা দেখে শংকিত হচ্ছিলাম। অন্যদিকে যাকেই জিজ্ঞাস করি সেই বলে, 'ভাই খামাখা এত উপরে উইঠেন না, উঠতে খবর হয়ে যাবে। যতটুকু উঠছেন তা কিছুই না মাত্র ১০ ভাগ আসছেন।'
এতটুকু উঠেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। যাত্রা পথে দেখলাম একটা ঝর্ণা। ঝর্ণাটা দেখে বেশ স্বস্তি পেলাম। তবে শীতকাল হওয়ায় তেমন পানি ছিল না।
যাইহোক আমরা তিনজন পানি স্যালাইন খেয়ে, টুকটাক বিরতি নিয়ে এগুচ্ছিলাম। আর যাত্রা পথে আমাদের হাসি তামাশা, ছবি তোলা তো ছিল। কিন্তু শরীর আর চলছিল না। স্যালাইন, পানিও শেষ। মনে হচ্ছিল নেমে যাওয়াই ঠিক। দম নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। তবে ওই যে মনের শক্তি আমাদের চূড়ায় যেতেই হবে। তাই-ই আমাদের এগিয়ে নিচ্ছিল। একটা পর্যায়ে আমরা পাহাড়টার তিনভাগের দুই অংশ উঠে একটা মন্দির পেলাম সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ বসার পর আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। বমি করে ফেললাম। আমি তখন হুট করে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার পক্ষে পুরো পাহাড় উঠা সম্ভব না। আমার এখান থেকেই নেমে যাওয়া উচিত। সাজ্জাদ আর শোভন আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল। কিছুক্ষণ এখানে বিশ্রাম নিলে আমার ভাল লাগবে, তখন আমরা আবার যাত্রা শুরু করতে পারবো। কিন্তু আমি এতই দুর্বল লাগছিল যে আমি ওদের সায় দিতে পারছিলাম না।
ওদের বললাম, তোরা পাহাড়ের চূড়ায় যা, আমি এখানে অপেক্ষা করি। নামার সময় এক সাথে নামব। এই কথা বলার পর আমার মনে হলো নামার জন্য এই রাস্তাটা উল্টা। এই রাস্তাটা দিয়ে নামতে ওদের কষ্ট হবে কারণ এটা উঠার রাস্তা। নামার রাস্তা চূড়ার অন্যদিকে। আমি ওদের কাছে ভাবার জন্য ১০ মিনিট সময় চাইলাম। আমি তখন মন্দিরটার গা ঘেসে বসে আছি। আমার চোখের সামনে উন্মুক্ত পৃথিবী। অদ্ভুত এক সৌন্দর্য, পাহাড়ের চূড়াগুলো দেখা যাচ্ছিল। প্রতিটা পাহাড় সবুজে মোড়া।
এ যেন এক মায়ার রাজ্য যার শেষ আমায় করতেই হবে। আমি ওদের ডাক দিলাম, বললাম আমিও যাচ্ছি। কোথা থেকে যেন শক্তি চলে এল, মনবল ফিরে পেলাম। আমাদের যাত্রা আবার শুরু হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা দোকান পেলাম। বলে রাখা ভালো সীতাকুণ্ড সনাতন ধর্মের মানুষের জন্য খুব পবিত্র জায়গা। প্রতিদিনই এখানে প্রচুর মানুষের আগমন হয়।
আমরা পানি আর কিছু খাবার খেলাম। আমাদের মোবাইলয়ের উচ্চতা মাপার অ্যাপসটা দেখাচ্ছিল আমরা এক হাজার ফুট উপরে আছি। পাহাড়ে চূড়ার উঠতে আর অল্প একটু রাস্তা বাকি। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। এত উপরে উঠা আমাদের তিনজনের জন্যই এই প্রথম। বাকি পথটুকু পেরুতে আর তর সইছিল না।
আবার হাঁটা দিলাম। অবশেষ টানা এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট পাহাড়ের বুক চিড়ে উঠে আসার পর মিলল কাঙ্ক্ষিত চূড়া।