'দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে'

ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়ার ৮০তম জন্মদিনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে গিয়েছিলাম খবর সংগ্রহ করতে। সেখানে অতিথিদের মধ্যে একটি ছেলেকে দেখে আমি অবাক হলাম। কোথায় পড়ে শুনে আরও অবাক। অতিথিদের মধ্যে আরও অনেকেই অবাক হয়েছিলেন।
'দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে'

মন্দির হামলা, প্রতিমা ভাংচুর, জঙ্গি হামলা, সংখ্যালঘুদের উপর নানান নির্যাতনের খবর প্রায়ই শুনে থাকি। এতে অপরাধী হিসেবে যাদের ছবি দেখি, এদের মধ্যে কারও কারও চেহারায় বিশেষ ধাঁচের দাড়ি ও পোশাক দেখা যায়। কিন্তু আজ যে ঘটনার কথা বলব, সেদিনের সন্ধ্যাটা একটু অন্যরকম অনুভব দিয়েছিলো। 

ছেলেটির নাম সঙ্গত কারণেই লিখলাম না। ও অতিথি হিসেবে নয়, এসেছিল ছড়াকারকে কাছ থেকে দেখতে।

পরে তার সম্পর্কে অরূপ দা'র (ছড়াকারের পুত্র) কাছে শুনলাম, দ্বাররক্ষী তাকে ডেকে বলছেন, দাড়িওয়ালা আর পাজামা-পাঞ্জাবি, টুপি পরা একটি ছেলে এই অনুষ্ঠানে ঢুকতে চায়। তাকে কী ঢুকতে দেওয়া হবে? 

অরূপ দা’ নিজে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। সাম্প্রতিক নানা জঙ্গি হামলার কথার কথা ভেবে ইতস্তত করছিলেন। কেন বিহারে ঢুকতে চায় ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করেন। ছেলেটি জানায়, সে সুকুমার বড়ুয়ার ছড়া পড়তে খুব ভালোবাসে। ফেইসবুকে তার জন্মদিন পালনের কথা জেনে এখানে এসেছে।

এ কথা শুনে অরূপ দা’ তাকে ঢুকতে দিয়েছেন। কিন্তু প্রোগ্রামের সারাটা সময়, কোনো সংকট হবে না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি।  

আমি নিজেও মুসলিম পরিবারের ছেলে। আমি সেখানে যেতে পারলে ছেলেটিও আসতে পারে। কিন্তু ওর নাম অতিথি তালিকায় ছিল না বলেই বিড়ম্বনাটা ঘটেছে।  

অনুষ্ঠান শেষে খেতে খেতে আমি নিজেও কথা বলি ছেলেটির সঙ্গে। জানতে পারি সে আলিয়া মাদ্রসায় পড়ে। বয়স আমার মতোই। বৌদ্ধবিহারে এসেছে কেন এ প্রশ্নের জবাবে সে একই জবাব দেয়, অরূপ দা’কে যা দিয়েছিল।

ও আরও বলে, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাই আমার কাছে মানুষে মানুষে মেলামেশায় ভেদাভেদ নেই।  

‘তবে হুজুররা বলেছেন, মূর্তি দেখা হারাম। বৌদ্ধবিহারে যাওয়ার বাধা আছে কি না জানি না।’

মুসলমান কবি-সাহিত্যিকের সংখ্যা খুব কম বলেও তার আক্ষেপ আছে। 

তবে দ্বাররক্ষী ছাড়া সেখানে ভিক্ষুরা ছিলেন, অনেক গণ্যমান্য অতিথি ছিলেন, তারা কেউ ছেলেটিকে ভ্রুকুঞ্চিত করেননি।

ওর সাথে কথাবার্তা বলে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকে হ্যালোতে লেখার পরামর্শ দিই। আর ঘটনাটি আমাকে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা থেকে আলাদা করে ভাবতে শিখিয়েছে বলেই হ্যালোর পাঠকদের এ ঘটনা জানানোর লোভ সামলাতে পারলাম না।

ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষের চেয়ে ধর্ম বড় নয়, এই কথাটিই আমি সেদিন ছেলেটির কাছে শিখেছিলাম। ভেদজ্ঞান যার যার নিজস্ব।

যে কোনো উৎসবের আনন্দ সবাই ভাগ করে নিলেই তা বাড়বে, কমবে না। পুরো বিশ্বকে জানাব, ধর্ম যার যার, আনন্দ সবার। আর সেদিনই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে বিস্মিত হয়ে চেয়ে দেখবে সবাই। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com