সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না

শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সমাজে শিশু-কিশোরদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না বা নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ দেয়া হয় না, সেখানে কোন শিশুরই সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব নয়।

সমাজ তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা। পুরুষ, নারী ও শিশু সমাজ। পুরুষরাই মূলত সমাজের যে কোন কাজে নেতৃত্ব দেয়। তবে বর্তমানে বিশ্বের কোনো কোনো দেশে, নারীরাও সমাজের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। অনেকাংশে নারীরা পুরুষদের চেয়েও এগিয়ে রয়েছেন। আমাদের দেশেও দেশ প্রধান একজন নারী।

উন্নত দেশগুলোতে সমাজের সব স্তরের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। এমন কি শিশুদেরও। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের সমাজে আজও পিছিয়ে রয়েছে শিশুরা। কিন্তু সব শিশুরই রয়েছে নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যা আজ বিভিন্নভাবে খর্ব হচ্ছে। সমাজের যে কোনো ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হলেও শিশু-কিশোরদের মতামত গ্রহণ করা হয় না, বুদ্ধিমত্তা বিকাশের সুযোগ দেয়া হয় না। ছোটরা অনেকাংশেই উপেক্ষিত  হচ্ছে, উপেক্ষা করা হচ্ছে তাদের মতামত। চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিদ্ধান্ত। সেগুলো তারা চায় কি না, তাদের উপযোগী কি না, ভাবা হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।

কোনো নিয়ম কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরদের জন্য চাপিয়া দেওয়া হয়? যদি হয়, তারা প্রতিবাদে, প্রতিরোধে আন্দোলনে নামে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় কারণ তারা শিশু-কিশোর। যদিও তারা মতামত প্রকাশ করে তবেই হবে বিপত্তি। তাদের বলা হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার বয়স হয়নি বা শুনতে হবে নানা আদেশ ও উপদেশ। যেমন হচ্ছে, পাঠ্যসূচি বা প্রশ্নপত্রের নানান ধরণে।

তবে কী শিশুদের নিজস্ব মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতাই নেই?

কিন্তু তারাও তো সমাজেরই একটি অংশ। আমাদের দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ ভাগ শিশু। তাই তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়াটা যেমন প্রয়োজন আবার তাদের  মতামতকে গুরুত্ব দেয়াটাও বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে অনেক সময় ছোটরাও অনেক বড় কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আনা যেতে পারে বালক শীর্ষেন্দুর কথা যে কিনা একটি সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল (ইতোমধ্যে সেতু তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে)।

তার পাঠানো সেই চিঠির উত্তর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রমান করেছেন যে সকলেরই নিজস্ব মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। তাই আমাদের সবারই উচিত শিশু-কিশোরদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করা এবং তাদের সাথে ঘটা   বৈষম্য দূর করা।কারণ শিশু-কিশোররাই দেশের ভবিষ্যৎ।

শিশু-কিশোরদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলে এবং তাদের প্রতিভা প্রকাশ করার মাধ্যম না দিলে তারা মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার যে মন্ত্র তা ব্যররথ হবে। তাদের দূরে রেখে সমাজ কখনও সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। জনসংখ্যা বাড়বে কিন্তু মানুষ তৈরি হবে না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com