কোচিং নিগ্রহের শেষ কোথায়?

ঢাকার একটি সরকারি কলজের দ্বিতীয় শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমি। শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছে চট্রগ্রামের বাশঁখালীর একটা কিন্ডারগার্টেনে। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার উন্নত পড়াশোনার জন্যে ঢাকায় চলে আসি। সেই থেকে এখন অবধি আমি কোচিং নামের নিগ্রহে ভুগছি, পাইনি মুক্তি।

গেল বছরের কথা বলছি, আমি সকালে উঠে মুখ ধুয়েই কখনও নাস্তা খেয়ে বা না খেয়েই দৌড় দিতাম কোচিং হোমে। তাড়াহুড়োর দিনগুলোয় পেছন থেকে মা চিৎকার করে বলতেন, ‘কিছু খেয়ে যা!’  

কোচিংয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হবে, নইলে শাস্তি অবধারিত। খেয়ে আসতে দেরি হওয়ায় কোচিংয়ের এক স্যার বলেছিলেন, ‘অনেক খেতে পাবে ভবিষ্যতে। আগে পরীক্ষায় এ প্লাস পাও।’

ছোট্ট শ্রীহীন আর জানালাবিহীন চার দেয়ালে আঁটা ঘরে গাদাগাদি করে সবার সাথে বসে পড়তাম নিচু টুলে। কোনোদিন পড়া বুঝতাম কখনও বুঝতাম না। কোনো পড়া না বুঝলে শিক্ষককে প্রশ্ন করতাম না। দ্বিধা হতো।    

একদিন কোচিংয়ের স্যারকে একটা অংক দেখালাম, যেটা স্কুলের স্যার করিয়ে দিয়েছেন। নিয়মটা আমার কাছে সহজ লেগেছিল। তিনি সেটা দেখে মন্তব্য করলেন, ‘তুমি কোন স্কুলের? এইটা কোন স্যার করিয়েছে? এটা কিছু হল? আমার নিয়মে কর।’ 

একটি কোচিং সেন্টার যেন অন্য কোচিংয়ের লেকচার কপি করে শিক্ষার্থীদের বিলি করতে না পারে সেটা নিয়ে খুব কড়াকড়ি ছিল। এখন অনেকেই কালো কাগজে ছাপানো নোট দেয়। ফলে অন্য কোচিংগুলো কপি করতে না পারলেও সেগুলো পড়তে খুব কষ্ট হয়। 

এক বিষয়ের কোচিং শেষ না হতেই ছুটে যেতাম অন্য বিষয়ের কোচিংয়ে। পুনরাবৃত্তি ঘটত রোজকার রুটিনে।

আমি যখন দশম শ্রেণির ছাত্র, স্কুল প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কোচিংয়ের প্রতিনিধিরা নিজেদের প্রচারণা চালাত। শ্রেণির ভাল ছাত্রকে ফ্রি পড়াবার কথা বলে প্রতিশ্রুতি দিত আর লিফলেট বিতরণ করার নামে বিদ্যাঙ্গণ ময়লা করে রাখত। এসব ছাড়াও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের অভিভাবকের যোগাযোগ নম্বর নিয়ে যেত। মুঠোফোন ক্ষুদেবার্তা পাঠাত, অভিভাবকদের ফোন করে আমন্ত্রণও জানাত।

কোচিং ক্লাস শেষ হবার পর দৌড়ে বাড়ি ফিরে খাবার খেয়েই স্কুলের পথে। আমার স্কুল বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। তাই ঘণ্টাখানেক আগেই বের হয়ে যেতাম। সময় না থাকলে না খেয়েই খাবার কেনার টাকা আর ভারি ব্যাগ নিয়ে দৌড়!

স্কুলে পৌঁছেই আমার প্রিয় বিজ্ঞানক্লাব নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করতে লেগে পড়তাম। ক্লাস শুরুর আগেই ক্লাসে উপস্থিত হতাম। তারপর টিফিনের সময় ভাজা-পোড়া, ভেজাল আর ময়লা খোলা খাবার খেয়ে নিতাম।

মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ফাহাদ ইবনে হাই স্যারের একটা কথা আজও ভুলতে পারি নি। তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষা ব্যবসায়ী শিক্ষকরা কখনই শিক্ষার্থীদের ভালাবাসা পেতে পারে না।’ 

স্কুলের স্যাররা ক্লাসে কোচিং হোমগুলির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাতেন। বলতেন, ‘এসব প্রতারণা।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com