‘কিচ্ছু হবে না বন্ধু!’

‘কেহ রহিবে না বন্দি কাহারো, উঠিছে ডঙ্কা বাজি নর যদি রাখে নারী বন্দি, তবে এর পরযুগে আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে’

কবির প্রতিবাদী লেখনি যে বিষয়টিকে তুলে ধরে তা হলো, নারী মুক্তি। বেগম রোকেয়ার হাত ধরে ধীরে ধীরে নারী মুক্তির পথে বেশ অগ্রসর হয়েছি আমরা। সময়ের পরিক্রমায় নারীর অদম্য পদচারণামুখর প্রিয় বাংলাদেশ। এমনকি আজ দেশ পরিচালনাতেও রয়েছেন নারী।

একজন বাংলাদেশি হিসেবে নারীর মর্যাদা ও মুক্তি নিয়ে যখন বেশ গর্বিত আমি; মুদ্রার অন্যপিঠ তখন কি বলে?

উত্ত্যক্ত, পাচার, পৈশাচিক ও পাশবিক নির্যাতনের যে ছবি আজকাল খবরের কাগজে আসে তা পড়ে বুঝতে পারি, নারীর প্রতি বর্বরতা আজ চরমরূপ ধারণ করেছে। 

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, চোখের সামনে পত্রিকা মেলে ধরতেও ভয় হয়; না জানি আজ কত পৈশাচিকতার  খবর পড়তে হবে। প্রতিদিন চারপাশের হাজারও নারী নির্যাতনের খবর পড়ে, শুনে ও দেখে একই সাথে কষ্ট, ক্ষোভ, অবাক ও অসহায় লাগে।

পৈশাচিক নির্যাতনের জ্বলন্ত উদাহরণ তনু হত্যাকাণ্ডের আজ নয় মাস পেরিয়ে গেছে,তবুও কোন বিচার হয়নি। তনু তো এক উদাহরণ মাত্র! তনুর মত হাজারও তরুণী আজও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে।

যে দেশ নারীদের জন্যও অভয়ারণ্য হওয়ার কথা, সেখানেও বাইরে গিয়ে একটু রাত হলেই সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা ছাড়া উপায় থাকে না। এমন কি নির্জন জায়গাতেও নিজের ভয় তাড়াতে একটি মেয়ে অপর মেয়ে বন্ধুকে ভরসা দেয়, ‘কিচ্ছু হবে না বন্ধু!’

প্রচণ্ড কষ্ট লাগে যখন পাঁচ বছরের শিশুও পৈশাচিকতার গ্রাস থেকে মুক্তি পায় না কিন্তু আমি তাদের সামান্যতম সাহায্যও করতে পারছি না।

পথে চলাচলের সময় তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের এক অংশকে নারীদের নিয়ে  নোংরা কথা বলতে শুনি। এমনকি দেশের নেতৃস্থানীয় নারীদের নিয়েও শুনি আপত্তিকর মন্তব্য। গা ঘিনঘিন করে ওঠে ভাবতেই, এরাও কারও বাবা, ভাই বা সন্তান! 

নারী নির্যাতনের এ গভীর আঁধারের মাঝে হারিয়ে খুঁজে বেড়াই একটুখানি আলো; কিন্তু হতাশ হই আমি। কবে নারী নির্ভয়ে একলা পথ চলতে পারবে? বন্ধ হবে নারীর প্রতি পৈশাচিকতা? কবে মিলবে ন্যায়বিচার? সত্যিকারের মুক্তি মিলবে কখন?

এসব প্রশ্নের কাগুজে জবাব হয়তো অনেকেই দিতে পারবেন। কিন্তু ইতোমধ্যেই ভুক্তোভোগী বা নির্যাতিতদের সান্ত্বনা মিলবে কবে? 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com