দিনদিন প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ডিজিটাল হচ্ছি। ক্লাসরুম ডিজিটাল হচ্ছে। এমনকি কোলের শিশুটিও মা-বাবার মোবাইলে গেম খেলতে শিখে গেছে। কারণ আজকাল মা-বাবা সাধারণত কোলের শিশুকে শান্ত রাখতে ছড়া বা গান শোনান না, মোবাইল, টেলিভিশন বা কম্পিউটারের কাছে সঁপে দেন।
Published : 20 Oct 2016, 08:32 PM
এ চিত্রটি নাগরিক শিশুর বেড়ে ওঠার। যেখানে, একক পরিবারে কর্মজীবী বাবা-মা ব্যস্ততার কাছে জিম্মি। কাজের বুয়া আর টেলিভিশন দেখে, প্লে স্টেশন বা মোবাইল ফোনে গেমস খেলে এরা শৈশব পার করে। কৈশোরে ডিজিটাল স্কুল, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, কোচিং হোমের ফোটোস্ট্যাট করা নোটস, সাপ্তাহিক ক্লাস টেস্ট থেকে শুরু করে বছরে অসংখ্য পরীক্ষার বেড়াজালে প্রায় রোবট হয়ে বেড়ে উঠছে। সহপাঠেও গড়ে উঠেছে প্রতিযোগিতা। সৃজনশীলতাও যোগ হয়েছে পাঠ্যসূচিতে। এখন নম্বর, গ্রেড বা পুরস্কার ছাড়া কোনো কিছুতেই এরা প্রাণিত হয় না। আনন্দ এখন নানান ডিজিটাল চৌকোণা বাক্সের দখলে।
এদের নাই একান্নবর্তী পরিবার, নাই ঘুমের সময় দাদীর কাছে রাজা-রাণি-রাক্ষসের গল্প। মার বকুনি শুনে চাচির ঘরে ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগ নাই। দাদার সাথে সকাল বেলা বেড়ানও নাই। এরা ফুল-পাখি চেনে বই দেখে, ফসলের গন্ধ জানে না, শিশির ভেজা ঘাসে এদের পা পড়ে না। অবারিত মাঠ, ডুব সাঁতার, গামছায় জল ছেঁকে ডোবা বা পুকুরে মাছ ধরা, অধরাই থেকে যায়। এরা গ্রামের আত্মীয়দের চেনে না। কখনও গ্রামে বেড়াতে গেলেও, ভিনগ্রহের জীবের মতো নিজেকে গ্রামীণজীবন থেকে আড়াল করে মোবাইলে মুখগুঁজে কটাদিন পার করে দেয়।
এরকম জীবনে সে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে, অনেক বড় হওয়ার আগে এরকমভাবে বেড়ে ওঠার ব্যাপারে কোনো খামতি টের পায় না। তাই বর্তমানে শিশুরা চারপাশের মানুষের চাইতে বেশি চেনে স্যাটেলাইট চ্যানেলে প্রচারিত কার্টুন বা সিরিয়ালের চরিত্রদের।
প্রযুক্তি ও পরিবর্তন সব সময় ইতিবাচকতা বয়ে আনে না। সারাদিন মোবাইল, টেলিভিশন, ট্যাব, ডেস্কটপে চোখ রাখতে রাখতে নানান শারীরিক-মানসিক রোগে ভোগে এরা বলে জানা যায়। তাই এরকম শিশুদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক বেড়ে উঠা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের সজাগ ও সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।